দক্ষ কর্মী পেতে অভিবাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া
অভিবাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। মূলত অত্যন্ত দক্ষ কর্মী পেতে এবং তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের পথকে আরও সহজ করতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজ দেশে অত্যন্ত দক্ষ কর্মী পেতে এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের পথকে মসৃণ করতে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া তার অভিবাসন ব্যবস্থাকে সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ লক্ষ্যে অভিবাসী বাছাই করার বর্তমান পদ্ধতি সংশোধনেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, দক্ষ অভিবাসী বাছাই করার জন্য বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় ‘পয়েন্ট টেস্ট’ সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সঠিক দক্ষ অভিবাসীকে খুঁজে পেতে সেই সিস্টেম সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটির ফেডারেল লেবার সরকার। আর এতে লাভবান হবেন অত্যন্ত দক্ষ কর্মীরা।
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল দেশটির জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থা... ভেঙ্গে গেছে। এটি আমাদের ব্যবসাকে ব্যর্থতার মুখে ফেলছে, এই ব্যবস্থা অভিবাসীদেরও ব্যর্থতার মুখে ফেলছে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- এই অভিবাসন ব্যবস্থা অস্ট্রেলিয়ানদেরও ব্যর্থ করছে। এটি চলতে পারে না।’
বার্তাসংস্থাটি বলছে, বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অস্ট্রেলিয়ায় দক্ষ কর্মীদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই আরও দক্ষ অভিবাসীদের নিজ দেশে আসতে প্রলুব্ধ করার জন্য কানাডা এবং জার্মানির মতো দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করছে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলছে, উচ্চ-দক্ষ পেশাদারদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সহজ করা হবে। এর পাশাপাশি পড়াশোনা করতে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় রেখে দেওয়ার জন্যও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার অস্থায়ী দক্ষ ভিসাধারীদের দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তবে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল বলছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ অস্থায়ী দক্ষ ভিসাধারীরা দেশে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তবে এটি অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী অভিবাসীদের বার্ষিক গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত করবে না বলে জানিয়েছেন ক্লেয়ার ও’নিল।
প্রায় ১১ বছর পর গত বছরের মাঝামাঝিতে ক্ষমতায় ফিরে আসে অস্ট্রেলিয়ার লেবার সরকার। এরপর আলবানিজ সরকার দেশের অভিবাসন নীতিকে সম্পূর্ণ নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়। এর পাশাপাশি স্থায়ী ও অস্থায়ী অভিবাসীদের জন্য ফেডারেল সরকার গ্রহণ করে বিভিন্ন প্রকল্প।
এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য দক্ষ এবং পারিবারিক ভিসার জন্য স্থায়ী অভিবাসীর সংখ্যা ৩৫ হাজার বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার।
মূলত ব্যাপক কর্মী ঘাটতির কারণে অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত সংগ্রাম করছে। আর তাই ভিসা প্রক্রিয়াকরণকে দ্রুততর করার জন্য আরও কর্মী ও তহবিল বরাদ্দের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার।
রয়টার্স বলছে, আগামী ১ জুলাই থেকে অস্থায়ী দক্ষ কর্মীদের অভিবাসী প্রান্তিক মজুরি ৫৩ হাজার ৯০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার থেকে ৭০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারে (৪৬ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার) উন্নীত করবে বলে সরকার ঘোষণা দিয়েছে। মূলত ২০১৩ সাল থেকেই এই মজুরি একই স্তরে আটকে রয়েছে।
অবশ্য অস্ট্রেলিয়ায় সকল ধরনের পূর্ণকালীন চাকরির প্রায় ৯০ শতাংশ চাকরিতে এখন বর্তমান প্রান্তিকের চেয়ে বেশি বেতন দেওয়া হয়। আর এটি অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে সরকার উল্লেখ করেছে।
টিএম