ভারতের অরুণাচল প্রদেশের ১১ স্থানের নাম পাল্টাল চীন
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশে বিভিন্ন স্থানের নাম পরিবর্তনে চীনের প্রচেষ্টায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নয়াদিল্লি। দেশটির সরকার বলেছে, তারা চীনের এই পদক্ষেপকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করছে।
মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, অরুণাচল প্রদেশ রাজ্য ভারতের অবিচ্ছেদ্য ও অখণ্ড অংশ আছে এবং থাকবে।
চীন বিতর্কিত হিমালয় সীমান্ত অঞ্চলের অরুণাচল প্রদেশের ১১টি স্থানের নাম পরিবর্তন করেছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারতের ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওই মন্তব্য করেছেন।
তবে অরুণাচলের ১১ স্থানের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত চীনের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। চীনের বেসামরিক কল্যাণবিষয়ক মন্ত্রণালয় সোমবার চীনা, তিব্বতি ও পিনইন ভাষার অক্ষরে অরুণাচল প্রদেশের ১১টি স্থানের নতুন নাম প্রকাশ করে।
ভারত এবং চীনের মাঝে প্রায় ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার বিতর্কিত সীমান্ত রয়েছে। উভয় দেশের সৈন্যরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) নামে পরিচিত ডি ফ্যাক্টো এই সীমান্তে যেকোনও ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এড়াতে দীর্ঘদিনের প্রোটোকল মেনে চলেন।
কিন্তু বিতর্কিত এই সীমান্ত এলাকায় চীন-ভারতের সৈন্যরা প্রায়ই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। আর নদী, হ্রদ এবং তুষারপাতের কারণে দুই দেশের সীমান্তরেখা প্রায়ই স্থানচ্যুত হয়ে যায়।
চীন পুরো অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে। বেইজিং অরুণাচল প্রদেশকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ বলে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুই সামরিক বাহিনীর সদস্যরা অরুণাচলের বিতর্কিত সীমান্ত এলাকার অনেক স্থানে কয়েক বার সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে তাওয়াং শহরের সীমান্তে ভারতীয় ও চীনা সৈন্যদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তবে বেইজিং যে এবারই প্রথম অরুণাচল প্রদেশের নাম পরিবর্তন করেছে এবং ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, বিষয়টি সেরকম নয়।
চীনের বেসামরিক কল্যাণবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১ এপ্রিল ‘দক্ষিণ তিব্বতের কিছু ভৌগোলিক মানসম্মত নাম’ ঘোষণা করার পর উভয় দেশের মাঝে উত্তেজনা তৈরি হয়।
অরুণাচলের যেসব এলাকার নাম চীন পরিবর্তন করেছে, তার মধ্যে রয়েছে পর্বতশৃঙ্গ, আবাসিক এলাকা, নদী এবং রাজ্যের রাজধানী ইটানগরের কাছাকাছি একটি শহর।
তবে ভারত বলেছে, বেইজিং উত্তর-পূর্ব রাজ্যের স্থানগুলোর নাম পরিবর্তন করতে পারে না। এক বিবৃতিতে বাগচি বলেছেন, চীন এই প্রথমবার এমন চেষ্টা করেছে না। আমরা সরাসরি এটা প্রত্যাখ্যান করছি।
তিনি বলেন, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের এক অবিচ্ছেদ্য, অখণ্ড অংশ। আর নতুন করে নামকরণের প্রচেষ্টা এই বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে পারবে না।
তিব্বতের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা দালাই লামার ২০১৭ সালের এক সফরের পর বেইজিং প্রথমবারের মতো অরুণাচল প্রদেশের ছয়টি জেলার নাম পরিবর্তন করতে চেয়েছিল। দালাই লামার সফরের ‘প্রতিশোধ’ হিসাবে ওই প্রচেষ্টা চালিয়েছিল বেইজিং। তিব্বতের আধ্যাত্মিক এই নেতা ওই বছরের এপ্রিলে অরুণাচল প্রদেশ সফর করেন।
পরে গত বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় একটি তালিকা প্রকাশ করে চীন। তখন এই অঞ্চলের ১৫টি স্থানের নাম পরিবর্তন করা হয়। তবে ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, তারা চীনের এই ধরনের অপচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
সূত্র: বিবিসি।
এসএস