তাইওয়ানকে ‘তল্পিতল্পা গুটিয়ে’ হন্ডুরাস ছাড়ার নির্দেশ
দীর্ঘদিনের মিত্র তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে চীনের হাত ধরেছে মধ্য আমেরিকান দেশ হন্ডুরাস। আর এর দু’দিন পরই তাইওয়ানকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে হন্ডুরান কর্তৃপক্ষ।
নির্দেশনা অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে তাইওয়ানকে হন্ডুরাসের দূতাবাস খালি করে চলে যেতে হবে। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইওয়ানকে অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে হন্ডুরাসে তার দূতাবাস খালি করতে হবে বলে হন্ডুরাসের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা সোমবার বলেছেন। হন্ডুরান প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রো তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন এবং এশিয়ান জায়ান্ট চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর এই নির্দেশনা দেওয়া হলো।
রয়টার্স বলছে, গত সপ্তাহান্তে তাইওয়ানের সাথে কয়েক দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং একইসঙ্গে বেইজিংয়ের সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরুর ঘোষণা দেয় মধ্য আমেরিকার এই দেশটি। আর এরপরই তাইওয়ানকে তার দূতাবাস খালি করতে হবে বলে সোমবার স্থানীয় টেলিভিশনে আদেশ জারি করেন হন্ডুরান উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও গার্সিয়া।
অবশ্য হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রোর প্রধান রক্ষণশীল বিরোধীরা ঘোষণা দিয়েছে, তারা ক্ষমতায় ফিরে আসলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্মুক্তকরণের এই পদক্ষেপ উল্টে দেবে।
মূলত বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোকে তাইওয়ানের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখার অনুমতি দেয় না চীন। কারণ গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত এই দ্বীপটিকে নিজস্ব ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাকে চীন।
চীনের দাবি, গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ান তার নিজস্ব ভূখণ্ড এবং এই কারণে তাইওয়ানের সঙ্গে কোনও রাষ্ট্র-থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রাখার অধিকার নেই। যদিও বেইজিংয়ের এই দাবি তাইপেই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে থাকে। তবে কমিউনিস্ট-চালিত চীন দাবি করে থাকে, তাদের সঙ্গে যেসব দেশের সম্পর্ক রয়েছে তাদের অবশ্যই বেইজিংয়ের এই অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
রয়টার্স বলছে, হন্ডুরাসের রাজধানী টেগুসিগাল্পার পালমিরা এলাকায় তাইওয়ানের দূতাবাসটি বছরের পর বছর ধরে মধ্য আমেরিকার এই রাজধানীর অন্যতম প্রধান বিদেশি দূতাবাস ছিল। একইসঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের পরে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম দূতাবাসও ছিল এটি।
সোমবার দেওয়া নির্দেশনায় হন্ডুরান উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও গার্সিয়া বলেন, ‘তল্পিতল্পা গোছানো এবং দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ৩০ দিন প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সময়’। কর্মকর্তারা একটি ‘শৃংখলাপূর্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ’ প্রস্থানের লক্ষ্য রেখেছেন বলেও জানান তিনি।
হন্ডুরান এই উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে একটি কূটনৈতিক মিশন চালুর প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। স্থানীয় শ্রমিকদের জন্য চীন হন্ডুরাসে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘চীন আমাদের দিতে পারে এমন বড় প্রকল্পগুলো অন্বেষণ করতে আমাদের সেখানে যেতে হবে।’
এছাড়া তাইওয়ানে বৃত্তিপ্রাপ্ত হন্ডুরান শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা চীনে স্থানান্তর করতে সক্ষম হবে বলেও জানিয়েছে হন্ডুরাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে শনিবার রাতে জারি করা এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় হন্ডুরাস। বিবৃতিতে হন্ডুরান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে একমাত্র বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যা সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাইওয়ান হচ্ছে ‘চীনা ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ’।
সংবাদমাধ্যম বলছে, মধ্য আমেরিকার দেশ হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রো তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং চীনের সাথে সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার কথা বলেছিলেন। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের অবস্থান পাল্টে তিনি তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার আশার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু চলতি মাসের মাঝামাঝিতে প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রো তার সেই অবস্থানও পাল্টে ফেলেন এবং তাইওয়ানকে দূরে ঠেলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক শুরুর কথা জানান। আর এরপর শনিবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘোষণা দিলো হন্ডুরাস।
অন্যদিকে হন্ডুরাসের এই পদক্ষেপে বিশ্বজুড়ে তাইওয়ানের মিত্রদের সংখ্যা আরও কমে গেছে। রয়টার্স বলছে, তাইওয়ানের এখন শুধুমাত্র ১৩টি দেশের সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। যার বেশিরভাগই মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ।
টিএম