জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ চূর্ণ করার অঙ্গীকার মিয়ানমার সেনাপ্রধানের
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে চলছে সামরিক শাসন। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে নিয়োজিত রয়েছে বেশ কিছু গোষ্ঠী। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দমনপীড়নের জেরে সৃষ্ট এসব গোষ্ঠী মিয়ানমারে বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষমতাসীন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে।
আর এবার জান্তাবিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে চূর্ণ করার অঙ্গীকার করেছেন মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রধান এবং সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। একইসঙ্গে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি। সোমবার (২৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রধান সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর লড়াইকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে অভিহিত করার পাশাপাশি তাদেরকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া তার সরকারের মানবাধিকার রেকর্ডের সমালোচনাকারী দেশগুলোকে সন্ত্রাসের সমর্থক হিসেবেও অভিযুক্ত করেছেন জেনারেল মিন অং হ্লাইং।
বিবিসি বলছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি’র নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে লিপ্ত আছে। দীর্ঘ এই সংঘর্ষে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
কিন্তু জেনারেল মিন অং হ্লাইং রাজধানী নেপিডোতে বার্ষিক সামরিক কুচকাওয়াজে বক্তৃতা দেওয়ার সময় একটি অদম্য বার্তা দেন। আর তা হলো: মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী তাদের শাসনের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই বন্ধ করবে না, যাই হোক না কেন।
৬৬ বছর বয়সী মিয়ানমারের এই সেনাপ্রধান এটাও উল্লেখ করেছেন, ‘মানুষের স্বার্থ নষ্ট করতে চায় এমন সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ শহরে’ সামরিক আইন ক্রমবর্ধমানভাবে জারি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ‘বিজয়ী দলের’ কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। যদিও চলমান সংঘাতের কারণে ওই নির্বাচন ঠিক কখন অনুষ্ঠিত হবে তা স্পষ্ট নয়।
বিবিসি বলছে, জাপানি আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিয়ানমারের জাতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠার ৭৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্তঃসারহীন এই ইভেন্ট বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। মূলত এর মাধ্যমে মিয়ানমারের জান্তা সরকার তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে থাকে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি অবশ্য চীন ও রাশিয়ার সমর্থন ধরে রেখেছে। এছাড়া সোমবারের এই কুচকাওয়াজে চীনা ও রুশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সম্প্রতি বেইজিং থেকে কেনা চীনা কে৮ গ্রাউন্ড অ্যাটাক এয়ারক্রাফট এবং এফটিসি২০০০ জেটের পাশাপাশি রাশিয়ান এমআই৩৫ গানশিপ এই কুচকাওয়াজে প্রদর্শন করা হয়েছে। সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এই অস্ত্রগুলোর বেশিরভাগই বিদ্রোহীদের ঘাঁটি ধ্বংসে ব্যবহার করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি এসব অস্ত্র ব্যবহার করে প্রায়শই বেসামরিক মানুষ এমনকি শিশুদেরও হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া গত শুক্রবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মূলত বেসামরিক জনবহুল এলাকায় সম্প্রতি বিমান হামলার পর সামরিক বাহিনীর জেট জ্বালানি সরবরাহকে লক্ষ্য করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।
টিএম