তাইওয়ানকে দূরে ঠেলে চীনের হাত ধরল হন্ডুরাস
অবশেষে তাইওয়ানের সঙ্গে কয়েক দশকের সম্পর্কের সমাপ্তি-রেখা টানল মধ্য আমেরিকান দেশ হন্ডুরাস। একইসঙ্গে তাইওয়ানকে ছেড়ে চীনের হাত ধরেছে দেশটি। মধ্য আমেরিকান এই দেশটি জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র চীনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
অন্যদিকে তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন্ডুরাসকে অত্যধিক পরিমাণ অর্থ দাবি করার এবং বেইজিংয়ের কথায় প্রলুব্ধ হওয়ার অভিযোগ করেছেন। শুক্রবার (২৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের সাথে হন্ডুরাসের দীর্ঘ সম্পর্কের সমাপ্তি বেশ প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক শুরু করতে হন্ডুরান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহে চীন সফর করেন। এছাড়া হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রোও সম্প্রতি বলেছিলেন, তার সরকার বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্ক শুরু করবে।
রয়টার্স বলছে, শনিবার রাতে জারি করা এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় হন্ডুরাস। বিবৃতিতে হন্ডুরান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে একমাত্র বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যা সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাইওয়ান হচ্ছে ‘চীনা ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ’।
মূলত বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোকে তাইওয়ানের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখার অনুমতি দেয় না চীন। কারণ গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত এই দ্বীপটিকে নিজস্ব ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাকে চীন।
চীনের দাবি, গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ান তার নিজস্ব ভূখণ্ড এবং এই কারণে তাইওয়ানের সঙ্গে কোনও রাষ্ট্র-থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রাখার অধিকার নেই। যদিও বেইজিংয়ের এই দাবি তাইপেই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে থাকে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, মধ্য আমেরিকার দেশ হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রো তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং চীনের সাথে সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার কথা বলেছিলেন। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের অবস্থান পাল্টে তিনি তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার আশার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু চলতি মাসের মাঝামাঝিতে প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রো তার সেই অবস্থানও পাল্টে ফেলেন এবং তাইওয়ানকে দূরে ঠেলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক শুরুর কথা জানান। আর এরপর শনিবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘোষণা দিলো হন্ডুরাস।
এদিকে হন্ডুরাসের এই ঘোষণার পরপরই রোববার প্রতিক্রিয়া জানায় তাইওয়ান। এদিন তাইপেইতে বক্তৃতাকালে তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ বলেন, গত বছরের শুরুতে দায়িত্ব গ্রহণ করা কাস্ত্রোর সরকারের চীন সম্পর্কে ‘সবসময় বিভ্রম ছিল’ এবং চীনের ‘প্রলোভন’ কখনোই থামেনি।
উ বলেছেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দূতাবাস প্রাসঙ্গিক তথ্য নিচ্ছে এবং সাবধানতার সাথে খতিয়ে দেখছে। যাইহোক, কাস্ত্রো সরকার আমাদের কাছে বিলিয়ন ডলারের বিশাল অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছিল এবং তাইওয়ান ও চীনের প্রদত্ত সহায়তা কর্মসূচির মধ্যে তারা মূল্য তুলনা করেছে।’
এদিকে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে হন্ডুরাসের এই ঘোষণার বিষয়ে চীন এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। তবে গত সপ্তাহে চীন বলেছিল, তারা হন্ডুরাসের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রস্তুত।
অন্যদিকে হন্ডুরাসের এই পদক্ষেপে বিশ্বজুড়ে তাইওয়ানের মিত্রদের সংখ্যা আরও কমে গেছে। রয়টার্স বলছে, তাইওয়ানের এখন শুধুমাত্র ১৩টি দেশের সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। যার বেশিরভাগই মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তাইওয়ানের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ছিন্ন করে নিকারাগুয়া। সেসময় দেশটি চীনের প্রতি আনুগত্য পরিবর্তন করে এবং ‘তাইওয়ান চীনা ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ’ বলে ঘোষণা দেয়।
অবশ্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট সেই সময়ে দেশগুলোকে তাইওয়ানের সাথে তাদের সম্পর্ক বজায় রাখতে উৎসাহিত করেছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, নিকারাগুয়ার এই সিদ্ধান্ত জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে না কারণ দেশটির সরকার স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হয়নি।
এছাড়া মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছিল, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে তাইওয়ান লাতিন আমেরিকার মিত্র প্যারাগুয়েকে হারাতে পারে। ওই সময়ে প্যারাগুয়েতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে এবং ওই নির্বাচনে বিরোধী দল জিতলে তারা চীনের সাথে সম্পর্ক গড়তে পারে।
লাতিন আমেরিকার এই দেশটির বিরোধী দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এফ্রেইন আলেগ্রে বলেছেন, প্যারাগুয়ে তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং চীনের সাথে সম্পর্ক উন্মুক্ত করবে। এর মাধ্যমে তিনি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সয়া এবং গরুর মাংস রপ্তানি বাড়ানোর আশা করছেন।
টিএম