বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের ঘোষণা পুতিনের
টানা ১৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ এই আগ্রাসনের জেরে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর ও এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের বাখমুত শহর দখলে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে রুশ বাহিনী।
এই পরিস্থিতিতে বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করবে। রোববার (২৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নিজের সর্বশেষ এই পদক্ষেপটি পারমাণবিক অপ্রসারণ চুক্তি লঙ্ঘন করবে না বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। একইসঙ্গে বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের এই সিদ্ধান্তকে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র স্থাপনের সাথেও তুলনা করেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বলেছেন, রাশিয়া বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিলেও মস্কো এই অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ মিনস্কের কাছে হস্তান্তর করবে না।
অবশ্য পুতিনের এই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তারা মনে করে না। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘(পুতিনের এই ঘোষণার পর) আমরা আমাদের নিজস্ব কৌশলগত পারমাণবিক অবস্থান সামঞ্জস্য করার কোনও কারণ দেখিনি। আমরা ন্যাটো জোটের সম্মিলিত প্রতিরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বেলারুশ হচ্ছে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ একটি মিত্র দেশ। বেলারুশিয়ান সরকার ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের কট্টর সমর্থক। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে বছরজুড়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সমর্থন করেছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো।
প্রেসিডেন্ট পুতিন শনিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দীর্ঘদিন ধরে বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের বিষয়টি তার কাছে উত্থাপন করেছেন।
পুতিন বলেন, ‘এখানেও অস্বাভাবিক কিছু নেই। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে এটি করে আসছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের মিত্র দেশগুলোর ভূখণ্ডে তাদের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করেছে।’
তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের স্টোরেজ সুবিধার নির্মাণ কাজ শেষ করবে।’
প্রেসিডেন্ট আরও পুতিন বলেছেন, ইস্কান্দার নামে অল্প সংখ্যক কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই বেলারুশে স্থানান্তর করা হয়েছে। আর এটি পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
অবশ্য ঠিক কবে নাগাদ অস্ত্রগুলো বেলারুশে স্থানান্তর করা হবে তা ভ্লাদিমির পুতিন উল্লেখ করেননি। তবে এই ঘোষণা বাস্তবে রূপ নিলে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করবে রাশিয়া।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো ইউরোপের দীর্ঘতম শাসক। গত ২৮ বছর ধরে তিনি বেলারুশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বেলারুশিয়ান এই প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমর্থন তাকে ২০২০ সালে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভের পরও টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল।
এছাড়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে সমর্থনের জন্য সাবেক এই সোভিয়েত রাষ্ট্রের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ বিলিয়ন ডলার মূল্যের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
টিএম