গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে হঠাৎ ক্রিমিয়ায় পুতিন
রাশিয়ার দখলে থাকা বিতর্কিত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ সফর করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের কাছ থেকে উপদ্বীপটি দখলে নেওয়ার নবম বার্ষিকী উপলক্ষে অঘোষিত এক সফরে শনিবার (১৮ মার্চ) ক্রিমিয়ায় যান তিনি।
ক্রিমিয়ায় এমন এক সময়ে পুতিনের এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তার মাথা ওপর। মূলত তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে আদালত। শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে শনিবার সেভাস্তোপলের রাশিয়ান-নিযুক্ত গভর্নর মিখাইল রাজভোজায়েভ অভ্যর্থনা জানান এবং পরে তাকে নতুন একটি শিশু কেন্দ্র এবং আর্ট স্কুল দেখতে নিয়ে যাওয়া হয়। রুশ এই কর্মকর্তা পুতিনের এই সফরকে সারপ্রাইজ বলে উল্লেখ করেছেন।
মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে রাজভোজায়েভ বলেছেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন জানেন কীভাবে সারপ্রাইজ দিতে হয়। তিনি এটি বেশ ভালো উপায়েই পারেন।’
মস্কো-নিযুক্ত এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ‘ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ ব্যক্তিগতভাবে এখানে এসেছিলেন। নিজেই গাড়ি চালিয়ে। এমন একটি ঐতিহাসিক দিনে, রুশ প্রেসিডেন্ট সর্বদা সেভাস্তোপল এবং সেভাস্তোপলের জনগণের সাথেই আছেন।’
আল জাজিরা বলছে, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে পুতিনের কোনও মন্তব্য সম্প্রচার করেনি। মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার এবং তাকে ইউক্রেন থেকে শত শত শিশুকে অবৈধভাবে নির্বাসনের জন্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করার একদিন পর এই সফরটি অনুষ্ঠিত হলো।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন এখনও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র এটিকে ‘অকার্যকর’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, আইসিসির উত্থাপিত বিষয়গুলোকে ‘আপত্তিকর এবং অগ্রহণযোগ্য’ বলে মনে করছে রাশিয়া।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এর আট বছর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি দখল করে নেয় মস্কো। তবে ইউক্রেন বলেছে, তারা ক্রিমিয়াসহ অন্যান্য সকল অঞ্চল থেকে রাশিয়াকে বিতাড়িত করতে লড়াই চালিয়ে যাবে।
পুতিন অবশ্য রাশিয়ার দখল করে নেওয়া কোনও এলাকা ত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। এর পরিবর্তে তিনি শুক্রবার ক্রিমিয়ায় দখলদারিত্ব ধরে রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
ক্রিমিয়ার বৃহত্তম শহর সেভাস্তোপলের কথা উল্লেখ করে পুতিন সেদিন বলেন, ‘অবশ্যই, নিরাপত্তা সমস্যাগুলো এখন ক্রিমিয়া এবং সেভাস্তোপলের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। যেকোনো হুমকি প্রতিহত করার জন্য আমরা যা যা করা দরকার তাই করব।’
এর আগে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগে গত শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। পুতিনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি বেআইনিভাবে ইউক্রেনের শিশুদের রাশিয়াতে সরিয়ে নিয়েছেন।
আদালত বলছে, এই অপরাধ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকেই ঘটে চলেছে। একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও।
মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই। আইসিসি যা করতে পারে তা হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা এবং গ্রেপ্তারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে বিচারের জন্য হাজির করা।
এছাড়া আইসিসি তার বিচারিক ক্ষমতাও শুধু সেসব দেশে প্রয়োগ করতে পারে, যে দেশগুলো এই আদালত গঠন করতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তিটি রোম সংবিধি নামে পরিচিত। রাশিয়া এই সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। তাই পুতিন বা মারিয়া এলভোভা-বেলোভাকে আপাতত এই আদালতের হাতে সমর্পণের কোনও সুযোগ নেই।
টিএম