মাটি খুঁড়ে মেট্রোর কাজ করতে গিয়ে মিলল গুপ্তধন!
মাটির নিচে চলছিল মেট্রো রেলের কাজ। মাটির নিচে খোদাই করতে করতে থমকে যান কর্মী এবং প্রযুক্তিবিদরা। কারণ মাটিতে কোপ মারতেই শোনা যাচ্ছিল টুং-টাং শব্দ। বেশ সাবধানে মাটি একটু সরাতেই উঁকি মারতে থাকে গুপ্তধন! মেট্রোর কাজ বন্ধ করে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা সেই সব ‘সম্পদ’ খুঁজে বের করতে তোড়জোড় শুরু করে প্রশাসন। ১৫ বছর আগে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে এই ঘটনা ঘটে।
নরম মাটির নিচ থেকে সেই নিদর্শন বাইরে বের করে আনা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। কয়েক বছরের চেষ্টায় সেই ‘সম্পদ’ মাটির নিচ থেকে বের করা হয়।
বছরের পর বছর ধরে সেই পরিশ্রমের ফল বর্তমানে দেখা যায় রোকিন স্টেশনে। রোকিন মেট্রো স্টেশনে তৈরি করা ভূগর্ভস্থ প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা সম্পদের প্রায় ১০ হাজার নিদর্শন রয়েছে। মেট্রো প্ল্যাটফর্মের ওঠানামার দুই সিঁড়ির মাঝে একটি কাচের ঘরে জায়গা পেয়েছে সেসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
• আরও পড়ুন: তিস্তার পানি আরও সরাতে নতুন করে খাল বানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ
রোকিন স্টেশনের আশপাশের এলাকা থেকে খোঁজ মেলায় সেসব নিদর্শনকে ওই স্টেশনেই রেখে দেওয়া হয়।
রোকিন শহর আমস্টেল নদীর ধারে অবস্থিত। এই শহর এবং নদী এক সময় আমস্টারডামের প্রাণকেন্দ্র ছিল। তবে পরে শহর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোকিনের গুরুত্ব কমে।
অনেকের মতে আমস্টেল নদীতে ভেসেই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো রোকিন এলাকায় এসে জমা হয় এবং বহু দিন ধরে পলি পড়ে পড়ে মাটির গভীরে ঢুকে যায়। আবার অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক দাবি করেছেন, উদ্ধার হওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ আমস্টারডামের গৌরবময় ইতিহাসের নিদর্শন।
• আরও পড়ুন: এক বছরে ইউরোপে নাগরিকত্ব নিয়েছেন ৯ হাজার বাংলাদেশি
পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্মীদের মতে, মাটির প্রায় ৩০ মিটার গভীর থেকে ওই নিদর্শনগুলোর খোঁজ পাওয়া যায়। যার মধ্যে আনুমানিক ১ লাখ ১৫ হাজার বছরের পুরোনো ঝিনুকের খোলও মিলেছিল।
উদ্ধারকৃত নিদর্শনগুলোর মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, বর্ম, খেলা ও বিনোদনের জিনিস, শিল্প-কারুকার্য, ছোট মূর্তি, পোশাকের টুকরো, বাড়ি নির্মাণের সামগ্রী ইত্যাদি। প্রত্নতাত্ত্বিক পিটার ক্রানেনডঙ্কের কথায়, উদ্ধার হওয়া বস্তুগুলোর মধ্যে ৫০০ বছরের পুরোনো মুদ্রাও রয়েছে।
তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও সেসবের মূল্য বিশাল কিছু নয়।
আমস্টারডামের উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো প্রকল্পের পরিচালক হাইত ডেইটমার বলেন, এই নিদর্শনগুলোর খোঁজ মেলার আগে শহরটিতে আরও প্রায় ৭০ হাজার নিদর্শনের খোঁজ মিলেছিল।
মেট্রোর জন্য জমি খোঁড়ার সময় বেশ কিছু আধুনিক জিনিসও মেলে মাটির নিচে। তার মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন এবং সিগারেটের পাইপ।
তবে এসব জিনিস উদ্ধার হওয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিকরা বেশ উদ্বিগ্ন। তাদের দাবি, এত কম সময়ের মধ্যে ওই আধুনিক জিনিসগুলো মাটির অত গভীরে চলে যাওয়া সম্ভব নয়। আমস্টারডামের মাটি কি তা হলে ধীরে ধীরে ধসে যাচ্ছে? প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাশাপাশি খননের সময় অনেক পশু এবং মানুষের হাড়ের টুকরোও উদ্ধার করা হয়েছে। এক সময় এই অঞ্চলে থাকা মাংসের দোকান থেকেই এই হাড়ের টুকরোগুলো মাটির নিচে জমেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মেলায় বেশ ঝামেলায় পড়েছিল মেট্রো কর্তৃপক্ষ। আমস্টারডামের উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো লাইনের নির্মাণকাজ ২০০৩ সালে শুরু হয়। কিন্তু এই নিদর্শনগুলোর খোঁজ চলার কারণে কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে।
প্রায় ১৫ বছর ধরে মেট্রো লাইন তৈরির কাজ চলায় বরাদ্দ করা খরচ প্রায় দ্বিগুণে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তবে রোকিন স্টেশনে ছোটখাটো ভূগর্ভস্থ জাদুঘরের খোঁজ মেলায় খুশি সাধারণ মানুষ। ওই জাদুঘর দেখতে বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ এসে রোকিন স্টেশনে ভিড় জমান।
সূত্র: আনন্দবাজার
এসএম