ভূমধ্যসাগরের মৃত্যুযাত্রায় সেই অভিবাসীদের খরচ মাথাপিছু ৯ লাখ
ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে জাহাজডুবির ঘটনায় নিহত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ জনে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন পাচারকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিরা ভূমধ্যসাগরের মৃত্যুযাত্রায় প্রত্যেক অভিবাসীর কাছ থেকে ৮ হাজার ইউরো করে নিয়েছিল।
বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ টাকা। বুধবার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে জাহাজডুবির ঘটনায় প্রসিকিউটররা সন্দেহভাজন অপরাধীদের চিহ্নিত করেছে যারা তুরস্ক থেকে বিপজ্জনক পন্থায় ইতালিতে পৌঁছে দিতে প্রত্যেক অভিবাসীর কাছ থেকে ৮ হাজার ইউরো করে নিয়েছিল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৫৪০ টাকা।
এদিকে অভিবাসীবাহী জাহাজডুবির পর মরিয়া আত্মীয় এবং বন্ধুরা তাদের প্রিয়জনকে খুঁজে পাওয়ার আশায় মঙ্গলবার ইতালির ক্রোটোন শহরে ভিড় করেন। এসব ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ আফগানিস্তান থেকে এসেছেন।
জার্মানি থেকে ২৫ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ক্রোটোন শহরের স্পোর্টস স্টেডিয়ামে স্থাপিত অস্থায়ী মর্গে পৌঁছান আলাদিন মহিবজাদা নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমি আমার খালা এবং তার তিন সন্তানকে খুঁজছি।
তিনি জানান, তার খালা এবং দু’টি শিশু মারা গেছে বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। তবে ৫ বছর বয়সী শিশুটি বেঁচে গেছে এবং তাকে নাবালকদের জন্য নির্ধারিত একটি কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।
মর্গের বাইরে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে তিনি বলেন, ‘আমরা (মৃতদেহ) আফগানিস্তানে পাঠানোর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি। তবে আমরা এখানে অসহায়। আমরা জানি না আমাদের কী করা উচিত।’
গত রোববার ভোরে ইতালির উপকূলের স্টেকাটো ডি কুত্রর কাছে এই জাহাজডুবির ঘটনায় উদ্ধারকারীরা এখনও পর্যন্ত অন্তত ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। মৃতদের মধ্যে ১৪ জন নাবালক। এছাড়া ৮০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরও অনেক লোক নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী- তুরস্কের ইজমির থেকে গত সপ্তাহে যাত্রা করার সময় জাহাজটিতে প্রায় ১৭০ জন আরোহী ছিলেন।
ঘটনাস্থলে থাকা ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, জাহাজে থাকা অনেক অভিবাসী ছিলেন আফগানিস্তানের। এমনকি অনেক আফগান তাদের পুরো পরিবারসহ জাহাজে ছিলেন। এর পাশাপাশি পাকিস্তান, সিরিয়া এবং ইরাক থেকে আসা অভিবাসীরাও জাহাজে ছিলেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইউরোপ মহাদেশের দীর্ঘস্থায়ী অভিবাসন সমস্যার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে ইউরোপীয় নেতাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, অভিবাসীদের বিপজ্জনক ভাবে সমুদ্র পারাপারে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
এপি বলছে, ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের বিপজ্জনক মৃত্যুযাত্রায় জড়িত হিসেবে তদন্তকারীরা তিন সন্দেহভাজন পাচারকারীকে শনাক্ত করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ক্রোটোনের প্রসিকিউটর জিউসেপ্পে ক্যাপোকিয়া। অভিযুক্ত ওই তিনজনের একজন তুর্কি এবং অন্য দুইজন পাকিস্তানি নাগরিক।
এছাড়া অভিযুক্ত সন্দেহভাজন অপর তুর্কি নাগরিক পালিয়ে গেছে বা মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতালির সীমান্ত পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, তুরস্ক থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালিতে পৌঁছে দেওয়ার এই বিপজ্জনক ‘মৃত্যুযাত্রার’ আয়োজকরা জাহাজে থাকা প্রত্যেক অভিবাসীর কাছ থেকে ৮ হাজার (প্রায় ৮,৫০০ মার্কিন ডলার) করে নিয়েছিল।
উল্লেখ্য, সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী অভিবাসীদের জন্য ইতালি অন্যতম প্রধান এক প্রবেশপথ। কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় এই রুটটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রোজেক্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে মধ্য-ভূমধ্যসাগরে অন্তত ২০ হাজার ৩৩৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন।
টিএম