রাশিয়ায় ড্রোন হামলার পর নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ পুতিনের
রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মস্কো ওব্লাস্ট অঞ্চলের কোলোমনা শহরের বেসামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলার চেষ্টার পর ইউক্রেনের সাথে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করার নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ওই ড্রোন হামলার ঘটনায় রুশ কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনকে দোষারোপ করেছে। একইসঙ্গে সর্বশেষ এই ঘটনা ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের এক বছর পর মস্কোকে নতুন একটি চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার মস্কোর মাত্র ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষার জন্য এই ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করা হচ্ছে।
পরে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার রাজধানীতে একটি বক্তৃতা করেন। সেখানে তিনি কোনো নির্দিষ্ট হামলার কথা উল্লেখ করেননি। তবে তিনি দক্ষিণ ও পশ্চিম রাশিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকাকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার কয়েক ঘণ্টা পর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছেন এবং রুশ কর্তৃপক্ষ পরে সেন্ট পিটার্সবার্গের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।
এছাড়াও মঙ্গলবার, বেশ কয়েকটি রাশিয়ান টেলিভিশন স্টেশন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কবার্তা প্রচার করে। তবে কর্মকর্তারা ওই ঘটনার জন্য হ্যাকিংকে দায়ী করেছেন।
এছাড়া মঙ্গলবারের ওই ড্রোন হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে গত সপ্তাহে ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীর কথা মাথায় রাখলে এটি রাশিয়ার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এদিকে ড্রোন-কাণ্ডের পর ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি, কিন্তু তারা একইভাবে পূর্ববর্তী হামলা ও নাশকতার জন্য সরাসরি দায় স্বীকার করা এড়িয়ে গিয়েছিল। মূলত মস্কো ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করার পর রাশিয়ার যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার বিষয়ে কিয়েভের অধিকার বেড়ে গেছে বলে মনে করা হয়।
ড্রোনে কোনো ক্ষতি হয়নি
স্থানীয় রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের মতে, সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের সীমান্তে ও দেশের অনেক ভেতরের অঞ্চলগুলোকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
মস্কো ওব্লাস্টের আঞ্চলিক গভর্নর আন্দ্রেই ভোরোবিভ বলেছেন, রাজধানী মস্কো থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে মঙ্গলবার ইউক্রেনের ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে। মস্কোর দক্ষিণ-পূর্বের একটি প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইউক্রেনের ছোড়া ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে।
ভোরোবিভ বলেন, ড্রোনটি কোনো ক্ষতি করেনি। তিনি ড্রোনটিকে ইউক্রেনীয় হিসাবে উল্লেখ করেননি। তবে বলেছেন, এটি সম্ভবত ‘বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলার লক্ষ্যে’ পাঠানো হয়েছিল।
ড্রোনটির যে ছবি সামনে এসেছে তাতে এটিকে ইউক্রেনীয় বলে মনে হয়েছে। এটির সীমা ৮০০ কিমি (প্রায় ৫০০ মাইল) পর্যন্ত হলেও এটি বড় ধরনের বিস্ফোরক বহন করতে সক্ষম নয়।
এদিকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের ভেতরে হামলার দায় স্বীকার করেনি ইউক্রেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, কোলোমনার ঘটনার পেছনে যদি সত্যিই ইউক্রেন জড়িত থাকে, তাহলে তা হবে রাশিয়ার রাজধানীর একেবারে কাছে ইউক্রেনের হামলার প্রচেষ্টা। এক বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর এবারই প্রথম মস্কোর কাছে এ ধরনের হামলার চেষ্টা করেছে কিয়েভ।
এর আগে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ক্রাসনোদার এবং আদিজিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল। মন্ত্রণালয় বলেছে, ড্রোন-প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে ছুটে আসা ড্রোনগুলো পথ থেকে সরে যাওয়ায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারেনি।
টিএম