জাহাজডুবি: ইতালিতে নিহত ৫৯ অভিবাসীর ২৮ জনই পাকিস্তানি
ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৯ জন অভিবাসী। নিহতদের মধ্যে ২৮ জনই পাকিস্তানি। এছাড়া নিহত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্য আরও বেশ কয়েকটি দেশের অভিবাসীও রয়েছেন।
ইউরোপের এই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে পাথরের সঙ্গে ধাক্কার পর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি জাহাজ ডুবে গেলে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এবং দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার ভোরে দক্ষিণ ইতালীয় উপকূলে বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের বহনকারী একটি কাঠের পালতোলা জাহাজ পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে ডুবে গেলে ২৮ জন পাকিস্তানিসহ ৬০ জন নিহত হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
দুর্ঘটনাকবলিত ওই জাহাজটি তিন বা চার দিন আগে পশ্চিম তুরস্কের ইজমির থেকে রওনা হয়েছিল বলে ইতালির দক্ষিণ ক্যালাব্রিয়া অঞ্চলের প্রাদেশিক সরকারি কর্মকর্তা ম্যানুয়েলা কুরা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাহাজটিতে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সোমালিয়া এবং ইরান থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহন করা হচ্ছিল।
ম্যানুয়েলা কুরা টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী- দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটিতে ১৪০ থেকে ১৫০ জন আরোহী ছিলেন। বেঁচে থাকা ৮১ জনের বেশিরভাগই আফগানিস্তানের বাসিন্দা এবং তাদের মধ্যে ২২ জন এখন হাসপাতালে রয়েছেন।’
কুরা বলেন, বেঁচে যাওয়া বেশিরভাগই আফগানিস্তানের, পাশাপাশি পাকিস্তানের কয়েকজন এবং সোমালিয়ার এক দম্পতি রয়েছেন। অভিবাসী পাচারের অভিযোগে বেঁচে যাওয়া একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গার্দিয়া ডি ফিনাঞ্জা কাস্টমস পুলিশ জানিয়েছে।
ইতালীয় রেড ক্রস কর্মকর্তা ইগনাজিও ম্যাঙ্গিওনি স্কাইটিজি২৪ কে বলেছেন, ডুবে যাওয়া জাহাজে থাকা খুব কম সংখ্যক শিশুই বেঁচে গেছে। লা স্ট্যাম্পার রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে কয়েক বছরের যমজ এবং কয়েক মাসের একটি শিশুও রয়েছে।
ইতালির কুত্রো শহরের মেয়র আন্তোনিও সেরাসো স্কাইটিজি২৪ নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন, তিনি ‘এমন একটি দৃশ্য দেখেছেন যা আপনি আপনার জীবনে কখনোই আর দেখতে চান না... এমন বিভীষিকাময় দৃশ্য ... যা সারাজীবন অপনার মনে থাকবে’।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম বলছে, জাহাজে থাকা পাকিস্তানিরা দেশটির গুজরাট, খারিয়ানা ও মান্দি বাহাউদ্দিনের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ডুবে যাওয়া জাহাজে পাকিস্তানিদের সম্ভাব্য উপস্থিতি সংক্রান্ত রিপোর্টের ওপর তারা গভীর নজর রাখছে।
টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ‘ইতালির উপকূলে ডুবে যাওয়া জাহাজটিতে পাকিস্তানিদের সম্ভাব্য উপস্থিতি সম্পর্কে যেসব রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে তাতে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছি। রোমে পাকিস্তানের দূতাবাস ইতালীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আরও তথ্য নিশ্চিত করার কাজ করছে।’
এদিকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃত্যুর জন্য ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ভবিষ্যতে এই ধরনের বিপর্যয় এড়াতে সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসীদের চলাচল বন্ধ করা হবে বলে জোর দিয়ে বলেছেন তিনি।
একইসঙ্গে দাতব্য সংস্থাগুলো অভিবাসীদের ইতালিতে বিপজ্জনক সমুদ্র যাত্রার মাধ্যমে আসতে উৎসাহিত করছে বলেও অভিযোগ করেছেন মেলোনি।
অন্যদিকে ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাতারেলা বলেছেন, ‘এই অভিবাসীদের মধ্যে অনেকেই আফগানিস্তান ও ইরান থেকে এসেছেন, তারা চরম কষ্টের পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে এসেছেন।’
উল্লেখ্য, সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী অভিবাসীদের জন্য ইতালি অন্যতম প্রধান এক প্রবেশপথ। কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় এই রুটটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রোজেক্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে মধ্য-ভূমধ্যসাগরে অন্তত ২০ হাজার ৩৩৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন।
টিএম