প্রেসিডেন্ট আলভির মুখে ইমরানের দাবি, চটেছে পাকিস্তান সরকার
গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক তারকা ক্রিকেটার ইমরান খান। পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই দেশে আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন তিনি।
তবে ইমরানের দাবির মতোই এবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভির কণ্ঠেও শোনা গেল অনেকটা একই সুর। তিনি বলেছেন, নির্বাচন বিলম্ব হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এরপরই চটেছে পাকিস্তানের সরকার। প্রেসিডেন্টের সমালোচনাও রয়েছে তাদের মুখে।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এবং দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদের হায়দ্রাবাদ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এইচসিসিআই) সম্মেলনে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি। সেখানে তিনি বলেন, সংবিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা যায়। আর তাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে।
তিনি বলেন, জেনারেল জিয়াউল হকের অভ্যুত্থান এবং তার পরবর্তী ১০ বছরের শাসনে নির্বাচন স্থগিত করে রাখার ফলে সেটি কিভাবে গণতন্ত্রকে লাইনচ্যুত করেছিল সেটি বর্তমান পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক নজির হিসেবে মনে করা যেতে পারে।
জেনারেল জিয়াউল হকের সামরিক শাসনের বিষয়ে ইঙ্গিত করে পাকিস্তানের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অতীতে আমরা নির্বাচন স্থগিত করার বিষয়টি দেখেছি এবং একজন ব্যক্তি ৯০ দিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সেসময় জানালেও তিনি ১০ বছর (ক্ষমতায়) ছিলেন।’
আরিফ আলভির ভাষায়, ‘এবং তিনি একজন রাজনীতিবিদ (সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো)-কেও ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন। যে দেশে নির্বাচন বিলম্বিত হয়, সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
পাঞ্জাব এবং খাইবারপাখতুনখাওয়ার (কেপি) বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি আবারও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে সভা করার জন্য একটি চিঠি লিখেছেন যাতে সাংবিধানিক প্রয়োজন অনুসারে উভয় প্রদেশে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যায়।
ড. আলভি বলেন, যে কোনও বিধানসভা ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাই সংবিধান অনুযায়ী এই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করা উচিত। তিনি বলেন, সংবিধানের বাস্তবায়নই সকল সমস্যার সমাধান এবং দেশকে সংকট থেকে বের করে আনতে সকল অংশীদারদের একত্রে বসতে হবে।
প্রেসিডেন্ট আলভি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার মধ্যেই এই সব সমস্যার সমাধান রয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের সংবিধান আক্রমণের মধ্যে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বলেন, সিইসিকে লেখা তার চিঠিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণও দিয়েছেন যেখানে যুক্তরাজ্যের সাথে যুদ্ধ এবং দাসপ্রথা বিলুপ্তির প্রক্রিয়া চলার সময়ও যথাক্রমে ১৮১২ এবং ১৮৬৪ সালে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এদিকে আরিফ আলভির এই বক্তব্যের পরই চটেছে শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান সরকার। এমনকি ‘আলভির উচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করা, ইমরানের মুখপাত্র নয়’ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ খান শনিবার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আলভির উচিত তার সাংবিধানিক মর্যাদাকে সম্মান করা। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আরিফ আলভির উচিত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করা, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ চেয়ারম্যান ইমরান খানের মুখপাত্র হিসেবে নয়।
তিনি বলেন, এর আগে ইমরান খান প্রেসিডেন্ট, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং গভর্নরদের দিয়ে অসাংবিধানিক কাজ করিয়েছেন। তার ভাষায়, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে প্রেসিডেন্টের কিছুই করার নেই এবং তিনি পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ বা অনুপ্রবেশ করছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে তার সাংবিধানিক সীমার মধ্যে থাকতে হবে।
টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের উচিত নয় পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের সীমা লঙ্ঘন করা। তার (প্রেসিডেন্ট আলভি) রাজনীতি করা উচিত নয়। তার মনে রাখা উচিত যে, তিনি ২০১৮ সালে একটি পাতানো নির্বাচন/ঘটনার ফলে সাংবিধানিক পদটি দখল করেছিলেন।
একইভাবে পাকিস্তানের আইন ও বিচার মন্ত্রী আজম নাজির তারারও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় প্রেসিডেন্টকে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সংবিধান তাকে প্রাদেশিক বিধানসভা নির্বাচনের তারিখ দেওয়ার অনুমতি দেয়নি।
তিনি আরও বলেছেন, আলভির তার ‘নেতার’ নির্দেশে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করা উচিত নয়।
টিএম