শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এলটিটিই প্রধান কি জীবিত?
শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ জীবিত বলে তামিল জাতীয়তাবাদীদের একাংশের করা দাবিকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তামিল বিভাগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার রভি হেরাথ বলেছেন, শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের একেবারে শেষ সময়ে প্রভাকরণ মারা যান।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ১৮মে গৃহযুদ্ধের শেষদিনে প্রভাকরণ নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যুর পরে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছিল। মৃতদেহটি যে প্রভাকরণের ছিল সেটিও ওই সময় নিশ্চিত করা হয়েছিল। এখন এটি নিয়ে কোনও অস্পষ্টতা নেই।
লঙ্কান সেনাবাহিনীর এই প্রধান বলেন, যে বিবৃতিতে বলা হচ্ছে তিনি জীবিত আছেন, তা নিয়ে আমরা মোটেই চিন্তিত নই। কারণ দাবিটা একেবারেই মিথ্যা।
লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম শ্রীলঙ্কায় বসবাসরত তামিল জনগোষ্ঠীর জন্য দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চল নিয়ে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৭৬ সালের ৫ মে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তবে তারা শ্রীলঙ্কার সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পুরোদমে শুরু করে ১৯৮৩ সালের মাঝের দিকে।
• প্রভাকরণ জীবিত, দাবি তামিল নেতার
তামিল নেতা ও লেখক পাঝা নেহুমারানের নেতৃত্বে তামিল জাতীয়তাবাদীদের একটি গোষ্ঠী সোমবার দাবি করেন, ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ এখনও জীবিত আছেন।
শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ নিয়ে একটি স্মারক উন্মোচনের সময়ে ওই গোষ্ঠীটি সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রভাকরণের বেঁচে থাকার দাবি করে। বলা হয়, প্রভাকরণ এবং তার পরিবার সুরক্ষিত আছেন।
‘আমরা এই সুসংবাদটা দিতে চাই যে তামিল ইলম আন্দোলনের নেতা প্রভাকরণ জীবিত আছেন, তিনি সুরক্ষিত আছেন। তার সম্পর্কে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তা এবার শেষ হবে।’
লেখক নেহুমারানের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীটি আরও বলে, ‘প্রভাকরণ খুব তাড়াতাড়ি তামিল মানুষের মুক্তির জন্য তার পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। আমরা চাই সারা দুনিয়ার তামিল জনগণ তার পরিকল্পনার সমর্থনে এগিয়ে আসুন।’
তামিলনাডুর মানুষ এবং সেখানকার সব রাজনৈতিক দলকেও প্রভাকরণের সমর্থনের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। নেহুমারান প্রভাকরণের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন এবং তাদের সম্মতি পাওয়ার পরই এলটিটিই প্রধানের জীবিত থাকার তথ্য প্রকাশ্যে আনছেন বলেও দাবি করেন।
• নিষিদ্ধ ছিল এলটিটিই
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ওপর নজরদারি চালানো সংগঠন সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টাল (এসএটিপি) বলছে, এলটিটিইকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
এসএটিপি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের ২০০৮ সালের এক প্রতিবেদনে এলটিটিইকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ও মারাত্মক উগ্রপন্থী সংগঠন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।
এলটিটিই একমাত্র সংগঠন যাদের সামরিক বাহিনীর তিনটি বিভাগ— স্থলসেনা বা টাইগার, সি টাইগার বা নৌসেনা আর বিমানবাহিনী ছিল। তারা বাহিনীতে নারী ও শিশুদেরও নিয়োগ করত বলে জানিয়েছে এসএটিপি। ইউনিসেফ ও হিউমান রাইটস ওয়াচ বারবার এলটিটিইর বিরুদ্ধে শিশুদের বলপূর্বক নিয়োগের অভিযোগ তুলেছিল।
পোর্টালটি শ্রীলঙ্কার সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল সারাথ ফনসেকার বরাত দিয়ে লিখেছে, ২০০৮ সালে এলটিটিইতে ১৮ হাজারেরও বেশি ক্যাডার ছিল।
• তিন দশকের গৃহযুদ্ধে নিহত লক্ষাধিক
কিছুদিন ধরেই তামিল ইলমের সমর্থকরা প্রভাকরণের জীবিত থাকার কথা বলে আসছেন। এলটিটিই অবশ্য ২০০৯ সালেই প্রভাকরণের মৃত্যু এবং গৃহযুদ্ধে নিজেদের পরাজয় স্বীকার করে নেয়।
তবে প্রায় তিন দশক ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধে দেশটির প্রেসিডেন্ট, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্যসহ শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ, নিজস্ব সংবাদদাতাদের বর্ণনা এবং সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেছিল, গৃহযুদ্ধে এক লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। জাতিসংঘ ওই গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নজরদারি চালিয়েছিল এবং তাদের পর্যবেক্ষণ ছিল শুধু শেষ পর্যায়েই প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা যান।
এসএস