হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে আদানি, ভরসা ওয়াচটেলে
‘ওয়াচটেল, লিপটন, রোজেন অ্যান্ড কাটজ’— সংক্ষেপে ওয়াচটেল; বাণিজ্যিক বিনিয়োগ সম্পর্কিত মার্কিন পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যয়বহুল এই আইনি সংস্থাকে নিয়োগ করেছেন আদানি গোষ্ঠীর কর্ণাধার গৌতম আদানি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদানি গোষ্ঠীর আইনি সংস্থা সিরিল অমরচাঁদ মঙ্গলদাসের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ওয়াচটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সিরিল অমরচাঁদ মঙ্গলদাস সংস্থার প্রধান সিরিল শ্রফের মেয়ে গৌতম আদানির পূত্রবধূ।
ওয়াচেল সংস্থার আদানিদের হয়ে আইনি লড়াই করার খবর প্রকাশ্যে আসতেই সেই সংস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল বেড়েছে। কেনই বা এই সংস্থাকে বেছে নিল আদানি গোষ্ঠী, সেই প্রশ্নও উঠে এসেছে।
১৯৬৫ সালে নিউইয়র্কের কয়েক জন আইনজীবী মিলে একটি আইনি সংস্থা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। নাম দেন ওয়াচটেল লিপটন।
এই আইনজীবীরা হলেন, হার্ব ওয়াচটেল, মার্টিন লিপটন, লিওনার্ড রোজ়েন এবং জর্জ কাটজ়। তারা চার জনেই নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। তাদের পদবি অনুযায়ীই এই সংস্থার নাম দেওয়া হয় ‘ওয়াচটেল, লিপটন, রোজ়েন অ্যান্ড কাটজ’।
একাধিক কর্পোরেট সংস্থার জটিল আইনি সমস্যা মেটানোর জন্য ওয়াচটেল খুব কম সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নাম করে নেয়। গত বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেরও নামীদামি বহু কর্পোরেট সংস্থা নিজেদের বিভিন্ন আইনি সমস্যা নিয়ে দ্বারস্থ হতে শুরু করেছে ওয়াচটেলের। বর্তমানে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ও ব্যয়বহুল আইনি সংস্থা।
ওয়াচটেলের দাবি—একত্রীকরণ ও অধিগ্রহণ (মার্জারস অ্যান্ড অ্যাকিউজ়িশন), কৌশলগত বিনিয়োগ (স্ট্র্যাটেজ়িক ইনভেস্টমেন্ট), দখল এবং দখল থেকে প্রতিরক্ষা (টেকওভার এবং টেকওভার ডিফেন্স), অংশীদারী সংক্রান্ত সমস্যা, কর্পোরেট আইন এবং কর্পোরেট পরিচালনা সংক্রান্ত সমস্যার আইনি লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের৷ বেশ কয়েকটি ‘যুগান্তকারী’ আইনি সমস্যার সমাধান করেছে বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।
পেশাজীবীদের সমাজমাধ্যম লিঙ্কডইনের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াচটেলে ৫০০ থেকে ১০০০ জন কর্মী কাজ করেন।
আদানিদের আগে টুইটারের হয়েও মামলা লড়েছিল ওয়াচটেল। তখনও ইলন মাস্কের মালিকানায় যায়নি টুইটার। ইলন তখন টুইটার কেনার ঘোষণা দিয়েছিলেন; কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিভিন্ন অছিলায় চুক্তি সই পিছিয়ে দিচ্ছিলেন বার বার। মাস্ককে আইনের প্রক্রিয়া ‘শেখাতে’ সে সময় ওয়াচটেলকে নিয়োগ করেছিল টুইটার।
আবার শেয়ার হোল্ডারদের সঙ্গে বিবাদ চলাকালে টেসলা এবং মাস্ককে আইনি জটিলতা থেকে বাঁচিয়েছিল এই ‘ওয়াচটেল’ই। সব ঠিক থাকলে খুব শিগগিরই আদানি গোষ্ঠীর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে হিন্ডেনবার্গের উদ্দেশ্য নিয়ে আইনি প্রশ্ন করতে দেখা যাবে এই সংস্থাকে।
ওয়াচটেলের ওয়েবসাইট বলেছে ৯/১১-এর মর্মান্তিক ঘটনা এবং সেই সঙ্গে আমেরিকার আর্থিক সঙ্কট সংক্রান্ত বহু মামলায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে এই সংস্থা।
সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লিপটন ‘বিষের বড়ি (পয়সন পিল)’ তত্ত্বের স্রষ্টা। এই তত্ত্বটি মূলত সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে একটি সংস্থাকে তার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মাধ্যমে দখলদারীর হাত থেকে বাঁচানোর এক ধরনের আইনি প্রতিরক্ষামূলক কৌশল।
সংস্থাটি বিখ্যাত মরিসন মামলায় ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। লেম্যান ব্রাদার্সের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মামলায় জেপি মরগ্যান চেজ়ের হয়ে মামলা লড়েছিল ওয়াচটেল।
ওয়াচটেল আইনি পরামর্শদাতা সংস্থা হিসাবে যেমন খ্যাতনামী, পরিষেবা দিতে তারা তেমনই দাম ধার্য করে। তাদের নিয়োগ করতে খরচ করতে হয় কোটি কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় অন্যান্য আইনি সংস্থার তুলনায় ওয়াচটেলের আইনি পরামর্শের ‘দাম’ সবচেয়ে বেশি।
গত ২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ভারতের শেয়ারবাজারের ওপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, নিজেদের কোম্পানির শেয়ারের দাম ঊর্ধ্বমুখী রাখতে গত কয়েক বছর ধরে আদানি গ্রুপ শেয়ার বাজারে কারচুপি করে যাচ্ছে। আদানিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগও তোলা হয়েছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে।
এদিকে, হিন্ডেনবার্গের প্রতিদেন প্রকাশ্যে আসতেই নড়ে গেছে আদানি গোষ্ঠীর ভিত। গত দু’সপ্তাহ ধরে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর পড়তে শুরু করেছে, যার জেরে ইতোমধ্যে শেয়ারবাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন আদানি।
এসএমডব্লিউ