পাকিস্তানি টিটিপির আগুন জ্বলছে কেন?
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার পেশোয়ারের মসজিদে সোমবারের আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে গেছে। পেশোয়ার পুলিশের সদরদফতরের মসজিদে সন্ত্রাসী এই হামলায় দেশটির নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে পেশোয়ারের মসজিদে বোমা হামলা চালানোর দায় স্বীকার করেছেন টিটিপির একজন কমান্ডার। তবে ওই কমান্ডারের বোমা হামলা চালানোর দাবি কয়েক ঘণ্টা পর নাকচ করে দিয়েছে টিটিপি।
দেশটির নিষিদ্ধঘোষিত এই গোষ্ঠী বলেছে, মসজিদে হামলা তাদের নীতিমালার বিরোধী। আফগান তালেবান পেশোয়ারের মসজিদে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানোর পর টিটিপি ওই বিবৃতি দিয়েছে।
• কিন্তু পাকিস্তানে কেন লড়াই করছে তালেবান?
পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান সংগঠন হিসেবে ২০০৭ সালে আত্মপ্রকাশ করে টিটিপি। আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন সশস্ত্র তালেবানগোষ্ঠীর মতোই পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে নিজেদের সরকার গঠন করতে চায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করে টিটিপি। আফগানিস্তানের বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তারা।
• টিটিপি কী চায়?
পাকিস্তানজুড়ে কট্টর শরিয়া আইন চালুর দাবিতে বেশ কয়েক বছর ধরে তৎপরতা চালিয়ে আসছে তেহরিক-ই-তালেবান। এর আগে কয়েকবার টিটিপি ও পাকিস্তানের সরকারের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বেশিরভাগ সময়ই তা ব্যর্থ হয়।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত উভয়পক্ষের অস্ত্রবিরতি কার্যকর ছিল।
পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি টিটিপি সদস্যদের মুক্তি, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায় সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি হ্রাস চায় টিটিপি। আফগান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়াকে নিজেদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে তারা।
পাকিস্তানের নারী শিক্ষা অধিকার কর্মী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইকে হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিতি পায় টিটিপি। রয়টার্সের তথ্যমতে, টিটিপির একের পর এক আত্মঘাতী হামলা ও বোমা হামলায় এরই মধ্যে পাকিস্তানের কয়েক হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
• কী করছে টিটিপি?
গত বছরের নভেম্বরের পর থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা বৃদ্ধি করেছে টিটিপি। দেশটির সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত এক শান্তিচুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে শুরু করে এই গোষ্ঠী।
এর মাঝেই আফগান ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী তালেবানের মধ্যস্থতায় কাবুলে পাকিস্তান সরকার ও টিটিপির প্রতিনিধিদের বৈঠকের আয়োজন শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়।
• কাবুলে তালেবানের ফেরায় চাঙ্গা টিটিপি
আফগানিস্তানের তালেবানের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও টিটিপি তাদের মতো একই ধরনের মতাদর্শ অনুসরণ করে।
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর তারা প্রকাশ্যেই টিটিপির প্রতি সমর্থন জানাতে শুরু করে। পূর্ববর্তী আফগান প্রশাসনের হাতে বন্দি টিটিপির নেতা ও যোদ্ধাদের মুক্তি দেয় তালেবান। আর এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে টিটিপি।
• মাশুল গুনছে পাকিস্তান
নভেম্বরের পর থেকে পাকিস্তানে টিটিপির হামলা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটিতে প্রায়ই তারা গোলাগুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকে হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে টিটিপি।
কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পাকিস্তানি তালেবান দেশটির এক সেনাসদস্যকে আটকের পর জনসম্মুখে তার শিরোচ্ছেদ করছে।
সম্প্রতি টিটিপির সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাইবার পাখতুনখোয়ার বাসিন্দাদের মাঝে ব্যাপক ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে দেশটির সামরিক বাহিনী বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনী যদি এই অভিযান পরিচালনা করে, তাহলে দেশটিতে আবারও রক্তবন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পাক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এসএস