মহাকাশে মিয়ানমারের স্যাটেলাইট আটকে রেখেছে জাপান
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ করা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগে মিয়ানমারের প্রথম স্যাটেলাইট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে রেখেছে জাপান।
এখন জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এবং জাপানি একটি বিশ্ববিদ্যালয় মিয়ানমারের স্যাটেলাইটের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে একথা জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
মিয়ানমারের সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত মিয়ানমার অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির (এমএইইউ) সঙ্গে যৌথভাবে এই স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছে জাপানের হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি। স্যাটেলাইটটির নির্মাণ খরচ পড়ে এক কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। মিয়ানমারের কৃষি ও মৎস্যখাতের ওপর নজরদারির জন্য এই স্যাটেলাইটটি মূলত তৈরি করা হয়।
কয়েকজন জাপানি কর্মকর্তা এবং মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হয়তো এই স্যাটেলাইটকে সামরিকখাতে ব্যবহার করতে পারে দেশটির জান্তা সরকার। আর এ কারণেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে স্যাটেলাইটটি আটকে রেখেছে জাপান। একইসঙ্গে বার্মিজ এই স্যাটেলাইট নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে জাপানের মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে আলোচনাও করছে হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটির দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে স্যাটেলাইটটি ব্যবহারের আশঙ্কা থাকায় সেটা মহাকাশ স্টেশনে আটকে রাখা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে দেশটির মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির (জেএএক্সএ) সঙ্গে আলোচনা করছে।
ওই দুই কর্মকর্তার মধ্যে প্রকল্পের ম্যানেজার রয়টার্সকে বলেন, ‘(মিয়ানমারের) সেনাবাহিনীর কাজে লাগে এমন কিছুর সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট হবো না। এছাড়া স্যাটেলাইটটির নকশাও সেজন্য (সামরিক কাজে ব্যবহারের) করা হয়নি।’
তিরি আরও বলেন, ‘এখন পরবর্তী করণীয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। কিন্তু কবে নাগাদ এটা আবারও মোতায়েন করা হবে; তা এখনও আমরা নিশ্চিত করে জানি না।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লাইং। এসময় স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে গ্রেফতার করা হয়।
অভ্যুত্থানের পর থেকে এর বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছেন হাজারও মানুষ। আন্দোলনের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে কার্যত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাত্যহিক বিক্ষোভ ও অবরোধের কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অচল হয়ে গেছে দেশটির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম।
বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও গতমাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের হাতে এখন পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
সূত্র: রয়টার্স
টিএম