ব্রিটিশ রাজপরিবার বর্ণবিদ্বেষী নয়: প্রিন্স উইলিয়াম
ব্রিটিশ রাজপরিবার কোনোভাবেই বর্ণবিদ্বেষী পরিবার নয় বলে জানিয়েছেন ডিউক অব ক্যামব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম। সম্প্রতি এক টিভি সাক্ষাৎকারে প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান মার্কেলের তোলা অভিযোগের পর প্রথম প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই মন্তব্য করলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) ইস্ট লন্ডনের স্ট্রাটফোর্ডে একটি স্কুল পরিদর্শনে যান ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য এবং প্রিন্স হ্যারির বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়াম। সেখানে এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন- ব্রিটিশ রাজপরিবার কোনো বর্ণবিদ্বেষী পরিবার কিনা? উত্তরে প্রিন্স উইলিয়াম বলেন, ‘ব্রিটিশ রাজপরিবার কোনো ভাবেই বর্ণবিদ্বেষী পরিবার নয়।’
এরপর অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে আলোড়ন তোলা সেই সাক্ষাৎকারের পর ভাই প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘না, আমি এখনও তার সঙ্গে কথা বলিনি। তবে আমি কথা বলবো।’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রিন্স হ্যারি ও ব্রিটিশ রাজপরিবারের ছোট পুত্রবধূ মেগান মার্কেলের তোলা বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করে বাকিংহাম প্যালেস। একইসঙ্গে অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে এবং গোপনে সেটা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানানো হয়।
বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা ওই সাক্ষাৎকারে অপরাহ উইনফ্রেকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ছোট পুত্রবধূ মেগান মার্কেল জানান, তার সন্তানের শরীরের ত্বক ঠিক কতোটা কালো হবে, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা। একইসঙ্গে রাজপরিবারের সদস্যরা এটা নিয়ে পেছনে পেছনে কথাও বলতেন। এমনকি সন্তানের গায়ের রং কতোটা কালো হবে এটা নিয়ে স্বামী প্রিন্স হ্যারিকে পরিবারের এক ব্যক্তি প্রশ্ন পর্যন্ত করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন মেগান।
তিনি বলেন, ‘তার সন্তান আর্চি জন্ম নেওয়ার আগেই তার গায়ের রং ঠিক কতোটা কালো হবে, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা। আর তাদের এই ‘দুশ্চিন্তাই’ স্পষ্ট করে দেয় যে, তার ছেলেকে কেন প্রিন্স উপাধি দেওয়া হয়নি।’
এছাড়া বিয়ের পর (রাজপরিবারের) কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য বা সহযোগিতা না পেয়ে নিজের ক্ষতি করার, এমনকি আত্মহত্যা করার কথাও তিনি চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন বলে জানান ব্রিটিশ রাজপরিবারের এই ছোট পুত্রবধূ।
সাক্ষাৎকারে মেগান বলেন, ‘(আমার গর্ভে সন্তান আসার পর) তারা কেউই তাকে প্রিন্স বা প্রিন্সেস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছিলেন না। এমনকি ছেলে হবে না মেয়ে; রাজপরিবারের কেউ এটাও জানতেন না। অর্থাৎ এটা প্রটোকলের বাইরে এবং বুঝতে পারি- জন্মের পর আমার সন্তান (প্রটোকল অনুযায়ী) নিরাপত্তা পেতে যাচ্ছে না।’
‘‘আমার প্রেগন্যান্সির সবগুলো মাসজুড়ে এই একই পরিস্থিতি চলছিল। অনাগত সন্তানের বিষয়ে ভেতরে ভেতরে কী কী কথাবার্তা চলছে সেগুলোও আমরা শুনতে পারছিলাম- ‘তাকে কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হবে না, রাজপুত্র বা রাজকুমারী উপাধিও দেওয়া হবে না’। এমনকি আমার সন্তানের গায়ের রং ঠিক কতোটা কালো হবে- সে বিষয়েও আমাদের পেছনে তাদেরকে আলোচনা করতে শুনতে পেতাম।’’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে এই যুগল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর ২০১৯ সালের মে মাসে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন মেগান। পরে তার নাম রাখা হয় আর্চি। বর্তমানে তার বয়স ১৯ মাস। সম্প্রতি গর্ভে দ্বিতীয় সন্তান ধারণের ঘোষণা দেন মেগান মার্কেল।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে হ্যারি-মেগান দম্পতি ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রতিনিধিত্ব আর না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। স্বাধীন জীবনযাপন করতে তারা রাজপরিবার থেকে বেরিয়ে যান। বর্তমানে এই দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন।
সূত্র: বিবিসি
টিএম