কানাডায় অভিবাসনে রেকর্ড, পিআর পেয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বিদেশি
উন্নত ও নিরাপদ জীবনযাপন, চাকরি বা পড়াশোনার জন্য বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দেশ কানাডা। আর তাই উত্তর আমেরিকার এই দেশটি বর্তমানে অভিবাসীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
আর এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই অভিবাসনে রেকর্ড গড়েছে কানাডা। গত বছর প্রায় সাড়ে চার লাখ বিদেশিকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দিয়েছে উত্তর আমেরিকার এই দেশটি। বুধবার (৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডা গত বছর ৪ লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি বিদেশিকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দিয়ে অভিবাসনখাতে রেকর্ড স্থাপন করেছে বলে দেশটির সরকার মঙ্গলবার জানিয়েছে। উত্তর আমেরিকার এই দেশটির শ্রমবাজারে কর্মী সংকট রয়েছে এবং সেই সংকট মোকাবিলায় অভিবাসন বাড়িয়েছে কানাডা।
রয়টার্স বলছে, কানাডার সরকার ২০২২ সালে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৫ জন নতুন স্থায়ী বাসিন্দাকে (পিআর) স্বাগত জানানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। দেশটির অভিবাসন মন্ত্রণালয় বলছে, নিজেদের ইতিহাসে এক বছরে সবচেয়ে বেশি লোককে গ্রহণ করার লক্ষ্যে পৌঁছেছে কানাডা।
গত বছরের এই সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ বেশি। ওই বছর কানাডা ১৯১৩ সালে সেট করা আগের রেকর্ডটিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে ১৪ লাখ ৫০ হাজার নতুন বিদেশিকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে দেশটিতে আনার চেষ্টা করছে কানাডা।
কানাডার অভিবাসন মন্ত্রণালয় বলছে, কানাডায় শ্রমবাজারে তীব্র কর্মী ঘাটতি রয়েছে এবং সেটি মোকাবিলায় অভিবাসনই মূল চাবিকাঠি বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া কানাডায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সাধারণত পাঁচ বছর পর দেশটিতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কানাডার শ্রমশক্তি বৃদ্ধির প্রায় ১০০ শতাংশ ইমিগ্রেশন বা অভিবাসনের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে এবং ২০৩৬ সালের মধ্যে অভিবাসীরা কানাডার জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করবে, যা ২০১১ সালে ছিল ২০.৭ শতাংশ।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কানাডার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং বয়স্ক জনসংখ্যাকে সহায়তা করার জন্য অভিবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
রয়টার্স বলছে, স্বাস্থ্যসেবার মতো শিল্পখাতগুলোতে দক্ষ কর্মীর ঘাটতি সবচেয়ে তীব্র এবং সাম্প্রতিক সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে দেশটিতে ৮ লাখ ৭১ হাজার ৩০০টি চাকরির শূন্যপদ ছিল। যা গত মে মাসে ছিল ১০ লাখেরও বেশি।
আর তাই কর্মী সংকট মোকাবিলার জন্য ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো দক্ষ অভিবাসীদের লক্ষ্য করে ড্রয়ের পরিকল্পনা করছে কানাডা। এর ফলে দেশের যে অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি কর্মীদের প্রয়োজন সেগুলোর জন্য সর্বাধিক চাহিদার দক্ষতাসহ আবেদনকারীদের চেরি-পিক করার সুযোগ থাকবে।
কিন্তু অনেক অভিবাসী কানাডায় স্থায়ী আবাস পাওয়া সত্ত্বেও এখনও তাদের পছন্দের কাজ খুঁজে পেতে সংগ্রাম করছেন এবং অনেকে বলছেন, নতুন স্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে সহায়ক কাজ বৃদ্ধি পায়নি।
কানাডার অভিবাসন মন্ত্রণালয় বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পরে আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে প্রক্রিয়াকৃত আবেদনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে প্রায় ৫২ লাখে পৌঁছেছে। আর তাই অভিবাসীদের আবেদনের এই ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে কার্যত লড়াই করছে কানাডা।
টিএম