উ. কোরিয়ার ড্রোন তাড়া করতে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান বিধ্বস্ত
দক্ষিণ কোরিয়ার আকাশসীমায় উত্তর কোরিয়ার ড্রোনের ঢুকে পড়া নিয়ে কোরীয় দ্বীপে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আকাশসীমা লঙ্ঘন করা উত্তর কোরিয়ার ড্রোনকে বাধা দিতে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কেএ-ওয়ান অ্যাটাক বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে।
সোমবার উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর আকাশসীমা লঙ্ঘন ঘিরে দক্ষিণের বিমান বিধ্বস্তের এই ঘটনা ঘটেছে। সিউলের সামরিক বাহিনীর বরাত দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
সিউলের বিধ্বস্ত বিমানের উভয় পাইলট নিরাপদে বেরিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। দক্ষিণের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইয়োনহাপ বলেছে, সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ কোরিয়ার জিওংগি-ডো প্রদেশের আকাশে ‘অপরিচিত বস্তু’র অনুপ্রবেশ শনাক্ত করেছে সামরিক বাহিনী; যা মনুষ্যবিহীন আকাশযান বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর দাবি, দুই দেশের সামরিক সীমান্তরেখা অতিক্রম করেছে একটি ড্রোন। পরে সেটি গিম্পো, গাংঘাওয়া দ্বীপ এবং পাজু এলাকার ওপর দিয়ে উড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম নিউজওয়ান বলেছে, ড্রোনগুলো একেবারে কম উচ্চতায় উড়েছে। এমনকি খালি চোখেই সেগুলো দেখা গেছে। আর এসব ড্রোনের একটি কিছু সময়ের জন্য সিউলের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।
আকাশসীমা লঙ্ঘনের এই ঘটনার জেরে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য সামরিক বিমান উড়িয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের একজন কর্মকর্তার মতে, উত্তর কোরিয়ার অনুপ্রবেশ করা ড্রোনটিতে কোনও অস্ত্র ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়।
নিজেদের আকাশে উত্তর কোরিয়ার ড্রোনের অনুপ্রবেশ শনাক্ত করার পর দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটি আদেশ জারি করে এবং সতর্কতা হিসেবে গুলি ছোড়ে। এই ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার মোতায়েন করা বিমানের মধ্যে ছিল একটি কেএ-ওয়ান লাইট অ্যাটাক যুদ্ধবিমান। অজ্ঞাত কারণে সিউলের পূর্বাঞ্চলের হোয়েংসেং কাউন্টিতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান বাহিনী বলেছে, বিমানটি একটি বেসামরিক ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতির কোনও তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
উত্তর কোরিয়ার ড্রোন ঘিরে তৈরি আকস্মিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং জিম্পো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বেসামরিক সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হন কর্মকর্তারা।
এর আগে, ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার একটি ড্রোন নজরদারি মিশন পরিচালনার সময় দক্ষিণ কোরিয়ার আকাশে প্রবেশ করে। পরে সন্দেহভাজন মনুষ্যবিহীন ওই ড্রোনটি সীমান্তের কাছে বিধ্বস্ত হয়। সেই সময় সিউলের সামরিক কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ড্রোনটি দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েনকৃত মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাডের ছবি তোলার চেষ্টা করেছে।
জাতিসংঘের ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার কাছে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩০০টি ড্রোন আছে। যার মধ্যে শত্রুর শক্তি নির্ণয়, লক্ষ্যে নিখুঁত হানতে সক্ষম এবং মনুষ্যবিহীন যুদ্ধ ড্রোনও রয়েছে।
২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত থিঙ্কট্যাংক প্রতিষ্ঠান কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশন পিয়ংইয়ংয়ের অস্ত্র বহনে সক্ষম প্রায় ১ হাজার ড্রোন রয়েছে বলে দাবি করেছিল।
সূত্র: ইয়োনহাপ, আরটি।
এসএস