বিশ্বকাপে হামলা চালাতে পারে ইরান, দাবি ইসরায়েলের
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে চলছে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়া ইভেন্ট উপভোগে সারা বিশ্বের নজর এখন কাতারে। ফুটবল আনন্দের জোয়ারে মানুষ এখন মেতে থাকলেও ইসরায়েলের দাবি, চলমান এই বিশ্বকাপ ইভেন্টে হামলা চালাতে পারে ইরান।
যদিও টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া ৩২টি দলের একটি হিসেবে আসরে খেলছে ইরান। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারে চলমান ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে ইরান আক্রমণ করতে পারে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রধান। ইসরায়েলি এই কর্মকর্তার নাম মেজর জেনারেল আহরন হালিভা।
তার দাবি, এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং ইরানে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের পর নিজেদের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য কাতারে হামলার মতো পদক্ষেপ ‘বিবেচনা করছে’ তেহরানের সরকার। ইরানে চলমান আন্দোলনে চার শতাধিক মানুষ মারা গেছে এবং ১৪ হাজারের মতো বিক্ষোভকারী কারাগারে বন্দি রয়েছে।
তেল আবিবের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ কনফারেন্সে এক ভাষণে হালিভা বলেন: ‘আমি আপনাদের বলব যে, ইরানীরা এখন কাতার বিশ্বকাপেও আক্রমণ করার কথা ভাবছে। ইরান ধারাবাহিক ভাবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইছে। আর সেটিও এমন এক সময়ে যখন দেশটির চারপাশের বিশ্ব স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ হচ্ছে। তবে ইরানের ভেতরে ঠিক এর বিপরীত কিছু ঘটছে।’
সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল মেজর জেনারেল আহরন হালিভাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘বিশ্বকাপ সম্ভবত সেই ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে যেখানে ইরান অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে।’
গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিক্ষোভে টালমাটাল ইরান। হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মারা যায় মাহসা আমিনি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, মাহসা আমিনিকে তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ তার চুল সঠিকভাবে না ঢেকে রাখার অভিযোগে আটক করেছিল। ২২ বছর বয়সী ইরানি কুর্দি এই তরুণী গ্রেপ্তার হওয়ার তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর থেকেই ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে।
মূলত এরপর থেকেই টানা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বিপর্যস্ত ইরান। ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ওই তরুণী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তবে ভুক্তভোগীর পরিবার এই বিষয়ে বিরোধিতা করে বলেছে, তাকে নৈতিকতা পুলিশ মারধর করেছে।
এএফপি বলছে, নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী আমিনির মৃত্যুর পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয় তা ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানের ক্ষমতাসীনদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
নরওয়ে ভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) ইরানের অভ্যন্তরে সহিংসতার সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে বলেছে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে দেশব্যাপী ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৪১৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৫১ শিশু এবং ২১ জন নারীও রয়েছেন।
সংস্থাটি আরও বলেছে, গত সপ্তাহে ইরানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আরও ৭২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৫৬ জন ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্দি-জনবসতিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দা। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরানের এই অঞ্চলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মকাণ্ড বেড়েছে।
আহরন হালিভা বলছেন, ‘বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে আমি ইরানের শাসক গোষ্ঠীর জন্য কোনও ঝুঁকি দেখছি না, তবে অভ্যন্তরীণ চাপসহ ইরানের ওপর চাপ বাড়ার সাথে সাথে তেহরানের প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হবে। তাই আমাদের এই অঞ্চলে এবং বিশ্বে ইরানের কাছ থেকে আরও বেশি আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া আশা করা উচিত।’
টিএম