কে হচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান, জানা যাবে ২৫ নভেম্বর
পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার উত্তরসূরীর নাম আগামী ২৫ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান আগামী দু’-একদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় ও সর্বজেষ্ঠ্য ৫ থেকে ৬ জন কর্মকর্তার নাম সম্বলিত একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। এই তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাদের সবাই জেনারেল পদবীর অধিকারী।
তালিকা পাঠানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সংবিধান মেনে সেখান থেকে যার নাম নির্বাচন করবেন, তাকেই পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হবে। শুক্রবারের মধ্যেই এই ঘোষণা দেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন খাজা আসিফ।
বর্তমান সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া আগামী অবসরে যাচ্ছেন ২৯ নভেম্বর। তার আগেই নতুন সেনাপ্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে।
পাকিস্তানে সেনাপ্রধান নিয়োগের ব্যাপারটি অন্যান্য দেশের সেনাপ্রধান নিয়োগের চেয়ে ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে। কারণ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তিলাভের মাত্র এক যুগের মধ্যেই গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে পিছু হটতে বাধ্য করে কেন্দ্রীয় শাসনক্ষমতা দখল করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সাবেক প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার আলি মির্জা ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর এক অধ্যাদেশে তৎকালীন পাকিস্তান জুড়ে সামরিক শাসন জারি করেন, সেই সঙ্গে প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন জেনারেল আইয়ুব খানকে। তার মাত্র ২০ দিন পর, ২৭ অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে নিজেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন আইয়ুব খান।
সেই থেকে দেশটির রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণ শুরু। তারপর গত প্রায় ৬৫ বছর ধরে কখনও সরাসরি, কখনও বা আড়ালে থেকে সর্বদা পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। এই সময়সীমার মধ্যে যে কয়েকজন বেসামরিক রাজনীতিক পাকিস্তানের শাসনক্ষমতায় এসেছেন, তাদের প্রত্যেককেই সেনাবাহিনী ও আইএসআইয়ের মদত ও আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে আসতে হয়েছে; এবং যেসব রাজনীতিকের ওপর সেনাবাহিনী ও আইএসআই রুষ্ট হয়েছে, তাদেরকে রাজনীতি থেকে তো বটেই, অনেক সময় দেশ— এমনকি পৃথিবী থেকেও বিদায় নিতে হয়েছে।
পাকিস্তানের সর্বশেষ সেনাশাসক ছিলেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। ১৯৯৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অপসারণ করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন তিনি। তার ৯ বছর পর ২০০৮ সালে দেশজুড়ে শুরু হওয়া ব্যাপক আন্দোলন এবং আদালতের শাস্তি এড়াতে পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য হন মোশাররফ।
তারপর থেকে সামরিক বাহিনী আর সরাসরি রাজনীতিতে আসেনি, তবে এখনও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে দেয় সেনাবাহিনী।
সূত্র : ব্লুমবার্গ
এসএমডব্লিউ