মাস্কের আল্টিমেটামের পর চাকরি ছাড়ছেন টুইটার কর্মীরা
সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট টুইটারের মালিকানা নেওয়ার পর থেকে ইলন মাস্ক একের পর এক নতুন নিয়ম চালু করে চলেছেন। সর্বশেষ তিনি কর্মীদের দীর্ঘ সময় কাজ করতে আর না হলে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। এমনকি নতুন নিয়ম মানতে আল্টিমেটামও বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি।
আর এরপরই টুইটার ছাড়ার হিড়িক পড়েছে কর্মীদের মধ্যে। মাস্কের আল্টিমেটামের কারণে শত শত টুইটার কর্মী এই সংস্থাটি ছেড়ে যাচ্ছেন বলে খবর বের হয়েছে। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টুইটারের নতুন মালিক ইলন মাস্কের একটি আল্টিমেটাম মেনে শত শত টুইটার কর্মী বিপাকে থাকা এই সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি ছেড়ে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন এই ধনকুবের তার আল্টিমেটামে কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘উচ্চ চাপে দীর্ঘ সময় ধরে’ কাজ করার বিষয়টি মেনে নিতে হবে বা চাকরি ছেড়ে চলে যেতে হবে।
মূলত বৃহস্পতিবার ইলন মাস্ক টুইটারে কাজের পরিবেশ নিয়ে যে কঠোর শর্ত রেখেছিলেন, তার প্রেক্ষিতেই একের পর এক কর্মী ইস্তফা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, টুইটার সংস্থার ইন্টারনাল চ্যাট গ্রুপে স্যালুট ইমোজি ও বিদায়ের বার্তায় ভর্তি হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। টুইটারের ইঞ্জিনিয়ার-সহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা চাকরি ছাড়তে শুরু করেছেন।
কর্মীরা জানিয়েছেন, সংস্থার নতুন মালিক ইলন মাস্ক গতকাল যে শর্ত দিয়েছেন, তাতে সবাই ক্ষুব্ধ। আর এ জন্যই তারা চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, কর্মক্ষেত্র-বিষয়ক অ্যাপ ব্লাইন্ডের একটি জরিপে দেখা গেছে, সেখানে যুক্ত থাকা টুইটারের ১৮০ জন কর্মীর মধ্যে ৪২ শতাংশ সোশ্যাল মিডিয়ার এই প্লাটফর্মটি ছাড়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন। মাস্কের আল্টিমেটামের পর তারা অ্যাপটিতে বলেছেন, ‘টেকিং এক্সিট অপশন, আই অ্যাম ফ্রি!’
কর্মক্ষেত্র-বিষয়ক এই অ্যাপটির নিয়ম অনুযায়ী, সেখানে কেউ যুক্ত হতে চাইলে অফিসিয়াল ইমেইল অ্যাড্রেসের মাধ্যমে তাদেরকে যাচাই করা হয় এবং কোনো কর্মী নাম বা পরিচয় প্রকাশ না করেই সেখানে তথ্য প্রকাশের সুযোগ পান।
ওই অ্যাপে যুক্ত থাকা টুইটার কর্মীদের এক চতুর্থাংশ বলেছেন, তারা ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও’ টুইটারে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ বলেছেন, তারা (মাস্কের শর্ত ও আল্টিমেটাম মেনেই) চাকরিতে থাকতে হ্যাঁ ক্লিক করেছেন এবং বলেছেন, আমি পরিশ্রমী।
এদিকে টুইটারের একজন বর্তমান কর্মী এবং সম্প্রতি চাকরি ছাড়ার পরও টুইটারের সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখা সাবেক এক কর্মী বলেছেন, ইলন মাস্ক টুইটারের কিছু শীর্ষ কর্মীর সাথে দেখা করেছেন এবং তাদের প্রতিষ্ঠানে থাকার জন্য রাজি করিয়েছেন।
মূলত চাকরি ছাড়া বা থেকে যাওয়ার বিতর্ক তখনই শুরু হয় যখন ইলন মাস্ক টুইটার কর্মীদের জানিয়ে দেন, কর্মীদের অবশ্যই ‘উচ্চ চাপের মধ্যে দীর্ঘ সময়’ কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, অন্যথায় সংস্থাটি ছেড়ে চলে যেতে হবে।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, সংস্থার কর্মীদের কাছে পাঠানো এক ইমেইলে টুইটারের নতুন এই মালিক বলেছেন, কর্মীরা থাকতে চাইলে তাদের এই অঙ্গীকারে সম্মত হওয়া উচিত।
এমনকি যারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে সাইন আপ করবেন না অর্থাৎ দীর্ঘ সময় কাজ করার প্রতিশ্রুতিতে একমত হবেন না তাদের তিন মাসের বেতন দিয়ে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে বলে মাস্ক জানিয়ে দিয়েছিলেন।
মাস্ক আরও বলেন, সফল হওয়ার জন্য টুইটারকে ‘অত্যন্ত কঠোর হতে হবে’। তার ভাষায়, ‘এর অর্থ হবে উচ্চ তীব্রতায় দীর্ঘ সময় কাজ করা। শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী কর্মক্ষমতা থাকলেই সেটি চাকরিতে টিকে থাকার পাসিং গ্রেড হিসেবে বিবেচিত হবে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সোশ্যাল মিডিয়ার জায়ান্ট এই সংস্থাটির কর্মীদের বলা হয়েছে, তারা ‘নতুন টুইটারের অংশ’ হতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে একটি লিংকে ক্লিক করতে হবে।
আর এরপরই কর্মীদের মধ্যে চাকরি ছাড়ার হিড়িক পড়ে। যদিও এটি স্পষ্ট নয় যে, ঠিক কতজন কর্মচারী শর্ত মেনে চাকরিতে থাকার বিকল্প বেছে নিয়েছেন, তবে চাকরি ছাড়ার আপাত সংখ্যা টুইটারে থাকার বিষয়ে কিছু কর্মীর অনিচ্ছাকেই তুলে ধরছে।
টুইটার এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। অবশ্য ইলন মাস্কের হাতে মালিকানা যাওয়ার পর কমিউনিকেশন টিমের অনেক সদস্যকে হারিয়েছে সোশ্যাল মিডয়ার জায়ান্ট এই সংস্থাটি।
টিএম