শততম দিনে ভারতের কৃষক বিদ্রোহ
নতুন তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত নভেম্বর থেকে ভারতে শুরু হওয়া টানা কৃষক আন্দোলন শততম দিনে পৌঁছেছে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আন্দোলনের ১০০তম দিনে দেশটির রাজধানী নয়া দিল্লির বাইরে ৬ লেনের একটি মহাসড়ক ৫ ঘণ্টা অবরোধ করেছিলেন আন্দোলনরত কৃষকরা।
শনিবার যে মহাসড়কটি তারা অবরোধ করেছিলেন, সেটি নয়া দিল্লির অন্যতম প্রবেশপথ।
আন্দোলনরত কৃষক সংগঠনগুলোর ঐক্যমঞ্চ সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে শনিবার ভোর থেকেই গাড়ি, ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে ওই মহাসড়ক অবরোধ করেন কৃষকরা। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের কৃষক নেতা অমরজীত সিং(৬৮) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার এই প্রতিবাদী আন্দোলনকে নিজেদের ইগো ইস্যুতে রূপান্তরিত করেছে। কৃষকদের কষ্ট তাদের চোখে পড়ে না।’
‘আন্দোলন ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনও পথ তারা খোলা রাখে নি।’
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দেশের কৃষি ব্যবস্থার সংস্কারে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তিনটি বিল উত্থাপন করে বিজেপি সরকার।
বিলগুলোতে কৃষিপণ্যের মজুতদারীর ওপর সীমা তুলে নেওয়া, কোম্পানি ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক চাষ এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস—এমএসপি) তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওই বিল তিনটি আইনে পরিণত হয়। নভেম্বর থেকে এই আইনগুলো বাতিলের দাবিতে দিল্লির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কয়েক লাখ কৃষক।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদিও বলেছেন, দেশের বিস্তৃত ও মান্ধাতা আমলের কৃষি ব্যাবস্থাকে ঢেলে সাজানো ও আধুনিকায়নই নতুন তিন কৃষি আইনের উদ্দেশ্য, কিন্তু তার এই বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারছেন না কৃষকরা।
তারা বলছেন, ওই তিন আইনের ফলে বেসরকারি নানা বড় বড় কোম্পানি কৃষিখাতে হর্তাকর্তা হয়ে যাবে এবং দরিদ্র কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বেন।
দিল্লিতে কৃষক আন্দোলন শুরুর পর থেকে মোর্চার নেতাদের সঙ্গে এ পর্যন্ত এগার দফা বৈঠক হয়েছে ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের। কিন্তু মোর্চার নেতারা আইন বাতিলের দাবিতে অটল থাকায় এবং কেন্দ্রীয় সরকার এই দাবির বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান নেওয়ায় এখন পর্যন্ত এই সংকটের কোনও সমাধান হয়নি।
শুরু থেকে ভারতের কৃষক আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হলেও ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কৃষকদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ট্রাক্টর মিছিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোরনকারীদের। ওই সংঘাতে এক কৃষক নিহতও হন।
তারপর থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও কঠোর অবস্থানে যায়। কৃষক আন্দোলন সমর্থনের অভিযোগে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, পরিবেশকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীকে আটক করেছে সরকার।
ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দিল্লি ও তার আশেপাশের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নেমে গিয়েছিল। প্রচণ্ড ওই ঠাণ্ডার মধ্যেও কৃষকরা সড়কে খোলা আকাশের নিচে দিন-রাত অবস্থান করে তাদের আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। এ পর্যন্ত এই আন্দোলনে মারা গেছেন ২৪৮জন কৃষক।
সামনেই গরমের মৌসুম আসছে। সে সময় দিল্লির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে; তাছাড়া ভারতের চাষাবাদের প্রধান মৌসুম গ্রীষ্মকাল। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা বাড়ি ফিরবেন না।
পাঞ্জাবের কৃষক রাজা সিং (৫৮) বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর ঠান্ডা আমাদের আন্দোলনকে দমাতে পারেনি। প্রাণঘাতী গরমও পারবে না।”
সূত্র: আলজাজিরা
এসএমডব্লিউ