বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট আর্টেমিস ১ উৎক্ষেপণ করল নাসা
মহাকাশ যাত্রার নতুন অধ্যায়ের সূচনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আর্টেমিস ১ নভোযান উৎক্ষেপণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)। বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৪ মিনিটে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে আর্টেমিস ১।
পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত যত নভোযান তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট এই আর্টেমিস ১। এ নভোযানটির প্রতি ঘণ্টায় পাড়ি দিতে সক্ষম ১ হাজার ৪০০ মাইল পথ।
নাসার কর্মকর্তাদের দাবি, গত শতকের পঞ্চাশের দশকে মহাকাশ অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত রকেট পাঠানো হয়েছে — আর্টেমিস ১ সেসবের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন।
পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে ২ লাখ ৮০ হাজার মাইল এবং চাঁদের কক্ষপথের বাইরে শত শত মাইল ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে রওনা হয়েছে আর্টেমিস ১। আর্টেমিসের সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় ওরিয়ন নামে আরও একটি ছোট নভোযান (অ্যাস্ট্রোনট ক্যাপসুল) পাঠানো হয়েছে এবং ইতোমধ্যে পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে যাওয়ার পর সেটি আর্টেমিস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চাঁদের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। আর্টেমিস ১ চাঁদের কক্ষপথ থেকে দূরে ভ্রমণ করলেও ওরিয়ন চাঁদের কক্ষপথেই অবস্থান করবে।
আর্টেমিস ১ এবং ওরিয়ন— কোনোটিতেই নভোচারী রাখা হয়নি।অভিযান শেষ হওয়ার পর আগামী ২২ ডিসেম্বর উভয় মহাকাশযান পৃথিবীতে ফিরে আসবে বলে জানিয়েছেন নাসার কর্মকর্তারা।
আর্টেমিস ১ ও ওরিয়ন পাঠানোর মূল কারণ মানুষের মধ্যে চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কিত আগ্রহ ও কৌতুহল ফের জাগিয়ে তোলা। ১৯৬৯ সালে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায়ত নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং। তার কিছুক্ষণের মধ্যে বাজ অলড্রিন চন্দ্রপৃষ্ঠে নেমে আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে যোগ দেন।
সেই অভিযানের ৫০ বছর পর আবারও চাঁদকে নতুন করে ছুঁয়ে দেখতে চাইছে মানব জাতি। সে কারণে চাঁদে ফের নভোচারি পাঠানোর আগে প্রস্তুতি অভিযান হিসেবে আর্টেমিস ১ ওরিয়ন নভোযান পাঠিয়েছে নাসা।
নেচার ম্যাগাজিনের প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে চাঁদ এবং মঙ্গলে মানব নভোচারি পাঠাতে চায় নাসা। আর্টেমিস ১ এবং ওরিয়নের অভিযানের সাফল্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে নাসার ভবিষ্যত দুই অভিযানের প্রস্তুতি। এই বিবেচনায় আর্টেমিস ১ উৎক্ষেপণকে মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে একটি মাইলফলক বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
নাসার কর্মকর্তা এবং আর্টেমিস ১ মিশনের ব্যবস্থাপক মাইক সারাফিন ওয়াশিংটনে নাসার সদরদপ্তর থেকে এএফপিকে বলেন, ‘মহাকাশ ও সৌরমণ্ডল সম্পর্কে এতদিন যেসব তথ্য জানা যায়নি, সেসব জানাই এ অভিযানের উদ্দেশ্য। বিশেষ করে ওরিয়ন পৃথিবীতে ফিরে আসার পর আমরা ফের চাঁদে মানব নভোচারী পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করব।’
এর আগে পরপর তিনবারের চেষ্টাতেও আর্টেমিস ১ উৎক্ষেপণ করতে পারেনি নাসা। প্রথম দুবারের উৎক্ষেপণ ভেস্তে গিয়েছিল কারিগারি জটিলতায়। শেষবার হারিকেন ইয়ানের ভয়ে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ভেহিকল অ্যাসেমব্লি বিল্ডিং (ভিএবি)-তে ফেরত গিয়েছিল আর্টেমিস ওয়ান।
এসএমডব্লিউ