পাঁচদিনে ৮০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া
কোরীয় উপদ্বীপে গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ছবি রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে পিয়ংইয়ং। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের তথাকথিত ‘বেপরোয়া সামরিক মৃগীরোগ’ কোরীয় উপদ্বীপকে ‘অস্থিতিশীল সংঘাতের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ছবি সোমবার প্রকাশ করা হলেও এতে দেশটির আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এছাড়া উত্তর কোরিয়া যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পুরো চিত্র সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের জন্য ধারণা পাওয়াও কঠিন, বলছে সিএনএন।
পিয়ংইয়ংয়ের ক্রমবর্ধমান ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ফলে ২০১৭ সালের পর দেশটি আবারও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। কোরীয় দ্বীপে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া এযাবৎকালের বৃহত্তম যৌথ আকাশ প্রতিরক্ষা মহড়া শুরু করে। ‘ভিজিল্যান্ট স্টর্ম’ নামের এই মহড়ায় দুই দেশের শত শত যুদ্ধবিমান প্রতীকী লক্ষ্যে টানা ২৪ ঘণ্টা আক্রমণ চালায়। যৌথ এই মহড়া শনিবার শেষ হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা কোরীয় সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির (কেসিএনএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২ থেকে ৫ নভেম্বর ৮০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে পিয়ংইয়ং। শত্রুপক্ষের সম্মিলিত মহড়া মোকাবিলায় উত্তর কোরিয়ার বিমান বাহিনীর ৫০০ যোদ্ধাও মহড়া পরিচালনা করেছেন।
কেসিএনএ বলেছে, গত সপ্তাহে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া ‘ভিজিল্যান্ট স্টর্মের’ উসকানির প্রতিক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং বিমান মহড়া চালিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শত্রুদের বিমান ঘাঁটিতে হামলার আদলে এবং বিভিন্ন উচ্চতা ও দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করা হয়েছিল। প্রত্যেকদিন নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যাও সংক্ষেপে প্রকাশ করেছে কেসিএনএ। তবে কোন মডেলের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হয়েছে সেবিষয়ে নির্দিষ্ট করেনি কিছু জানায়নি এই সংবাদ সংস্থা।
গত বৃহস্পতিবার নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে বিস্তারিত জানায়নি কেসিএনএ। যদিও ওই দিন উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল বলে দাবি করেছে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া।
উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার মহড়া ছিল পিয়ংইয়ংয়ের জন্য ‘উন্মুক্ত উসকানি’। ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে উত্তেজনা বাড়ানোর লক্ষ্যে’ খুব উচ্চ-আক্রমণাত্মক প্রকৃতির বিপজ্জনক এই যুদ্ধ মহড়া চালানো হয়েছে।
উত্তরের সেনাবাহিনীর দাবি, শত্রুদের ক্রমাগত যুদ্ধের মনোভাব ধ্বংস করতে তাদের বিমান ঘাঁটি এবং বিমানের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রধান শহরে বিভিন্ন আক্রমণের অনুকরণে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তারা।
গত ২ নভেম্বর উলসানের জলসীমার দিকে দুটি দৃশ্যত পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ‘কৌশলগত’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় এই শহরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বড় শিল্পাঞ্চল রয়েছে।
উত্তর কোরিয়ান পিপলস আর্মির (কেপিএ) জেনারেল স্টাফ সিউল এবং ওয়াশিংটনকে ‘আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’ সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত করেছে এবং ‘টেকসই, দৃঢ় এবং অপ্রতিরোধ্য বাস্তবিক সামরিক পদক্ষেপের’ মাধ্যমে তাদের মহড়া মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কেসিএনএ’র প্রকাশ করা প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ান পিপলস আর্মির বরাতে বলা হয়েছে, ‘শত্রুদের উসকানিমূলক সামরিক পদক্ষেপ যতই ক্রমাগতভাবে এগিয়ে যাবে, কেপিএ ততই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং নির্মম-নির্দয়ভাবে তাদের মোকাবিলা করবে।’
এসএস