জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনায় ভূমিকা রাখবে যারা
বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যস্ত ধরিত্রীকে রক্ষায় মিশরের শহর শার্ম আল-শেখে রোববার (৬ নভেম্বর) শুরু হয়েছে জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৭)। ১৩ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে প্রায় ২০০টি দেশ যোগ দিয়েছে।
এতে অংশ নেওয়া দেশেগুলোর মধ্যে কিছু দেশ ও গ্রুপ এ আলোচনায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সম্ভাব্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন। এ বছরই দেশটিতে গ্রীষ্মে সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু জ্বালানি নিরাপত্তার কথা বলে কয়লার ব্যবহার বাড়াচ্ছে দেশটি। তবে কয়লার ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে চীন। জ্বালানি নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রাজনীতিও বড় ভূমিকা রাখছে। এদিকে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক জলবায়ু আলোচনা বাতিল করেছে চীন।
চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি দেশটি কিছু আইনি পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে দেশটিতে সবুজ জ্বালানি এবং পরিবহণে কয়েক লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগ সম্ভব হবে। আগস্টে ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্টে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সই করার ফলে দেশটির ন্যাশনাল গ্রিডে সবুজ বিদ্যুৎ বাড়বে। এই দশকের শেষ থেকে বছরে ১০০ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের আট শতাংশের জন্য দায়ী। তবে এর পরিমাণও অনেক বছর ধরেই কমছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৯৯০ সালের তুলনায় কার্বন নিঃসরণ ৫৫% কমানোর আইন পাস করেছে এই জোট। কিন্তু কীভাবে এই লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, এ নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। জলবায়ু সম্মেলনে একক গ্রুপ হিসেবে আলোচনায় অংশ নেয় ইইউ।
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিদ্যুৎ সংকটের ফলে গতবারের জলবায়ু সম্মেলন আয়োজক দেশটির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হুমকিতে পড়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশটি। নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নেতৃত্বে কীভাবে দেশটি জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, তা স্পষ্ট নয়। যুবরাজ থাকা অবস্থায় জলবায়ু নিয়ে সোচ্চার থাকা বর্তমান রাজা চার্লস মিশরের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না বলে জানানো হয়েছে।
এই ব্লকে রয়েছে ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা, ভারত এবং চীনের মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলো। ২০২১ সালের সম্মেলনে চীনের মতো ভারতও কয়লার ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ব্রাজিল কার্বন ক্রেডিট মার্কেটের নিয়ম নির্ধারণে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়। সাউথ আফ্রিকা জীবাশ্ম থেকে সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরের জন্য সাড়ে আট হাজার কোটি ডলারের চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে।
এদিকে চীন এবং অন্য ৭৭টি দেশের এই জোট মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তনে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে। জলবায়ু সম্মেলনে এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেবে বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান। এই গ্রুপের অন্যতম দাবি, ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে একটি স্থায়ী তহবিল গঠন করা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থাকা উন্নত দেশগুলোর জোট এটি। এতে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো।
জাতিসংঘের সদস্য আফ্রিকার দেশগুলোর দাবি, আরও বেশি জলবায়ু অর্থায়ন। উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিদ্যুৎ সক্ষমতা বাড়াতে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রয়োজন বলেও মনে করে এই গ্রুপ। মিশরসহ বেশকিছু আফ্রিকান দেশ রূপান্তর জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত গড়ে তুলতে চায়। রাশিয়া থেকে আমদানি করা গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ইউরোপকে এই গ্যাস সরবরাহও করতে চায় দেশগুলো।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা ৫৮টি দেশের এই গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশও। এই গ্রুপের প্রধান দাবি হলো ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’-এর ভিত্তিতে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা। এই জোট আওসিস নামেও পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূল ক্ষয়ের কারণে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে এই দেশগুলো।
মোট ১৩ দিনব্যাপী সম্মেলনের এবারের আয়োজনে ১৯৮টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বা তাদের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। তবে গতবার গ্লাসগোতে কপ-২৬-এ অংশ নিলেও এবার মিশর যাচ্ছেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, কনফারেন্স অব দ্য পার্টিসের সংক্ষিপ্ত রূপ কপ। এটি বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতিসংঘের একটি উদ্যোগ। ১৯৯৫ সালে কপের প্রথম সম্মেলন হয়। ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিতে কপের জলবায়ু সম্মেলনে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ইস্যুটি প্রথমবারের মতো সামনে আসে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। সবশেষ গত বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপের ২৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এমএ