হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজাচ্ছে বেইজিং
হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন। দেশটির দাবি- দেশপ্রেমিকদের হাতেই যেন হংকংয়ের দায়িত্ব থাকে; এটা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চীনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) সম্মেলনে শুক্রবার (৫ মার্চ) এই ঘোষণা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন এবং ভূখণ্ডটিতে চীনা নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করার পর এবার সেখানকার নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দেওয়া হল। এর অর্থ- হংকংয়ের মাটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো ভাবেই সহ্য করবে না শি জিনপিংয়ের প্রশাসন।
বিবিসি জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহ ধরে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) সম্মেলন চলবে। এই সম্মেলনেই হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে প্রস্তুতকৃত খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হবে। সম্মেলনে অংশ নিতে হাজার হাজার আইনপ্রণেতা এখন বেইজিংয়ে অবস্থান করছেন।
হংকং নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এই সম্মেলনে শুক্রবার নিজেদের ১৪তম পাঁচসালা পরিকল্পনা তুলে ধরতে যাচ্ছে চীন। আগামী কয়েক বছরের জন্য নিজেদের অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতিধারার রোডম্যাপ হবে এই পরিকল্পনা। এছাড়া জলবায়ু ও পরিবেশগত বিষয়েও বেইজিংয়ের নীতি ঘোষণা করতে পারে চীনা কর্তৃপক্ষ।
হংকংয়ে যে পরিবর্তন আনা হচ্ছে
এনপিসি’র ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াং চেন শুক্রবার জানিয়েছেন, ‘হংকংয়ের মৌলিক আইন’র কয়েকটি ধারা সংশোধন করা হবে। ‘হংকং’স ব্যাসিক ল’ আসলে ভূখণ্ডটির মিনি সংবিধান নামে পরিচিত।
সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন যে আইন প্রণয়ন করা হবে, সেখানে রাজনৈতিক কার্যকলাপ কাকে বলা হবে, তার নতুন করে ব্যাখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। রাজনৈতিক প্রচারও কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। আর বর্তমান বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন অনুসারে এই গণতন্ত্রপন্থিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
ওয়াং চেন আরও বলেন, হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি রয়েছে; যার কারণে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরা ভূখণ্ডটির স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলছেন। তার মতে, এই ‘ঝুঁকি’ দূর করা প্রয়োজন। এছাড়া হংকংয়ে ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে গত ১ মার্চ ৪৭ জন গণতন্ত্রপন্থিকে গ্রেফতার করে হংকংয়ের নিাপত্তা বাহিনী। আনুষ্ঠানিক পৌর নির্বাচনের আগে একটি আনঅফিসিয়াল প্রাইমারি ভোটে অংশ নেওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, এটা আত্মঘাতী চক্রান্ত।
বেইজিং প্রণীত অত্যন্ত বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনটি চালু হওয়ার পর দ্বিতীয়বার এতোজন গণতন্ত্রপন্থিকে একসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে মোট ৫০ জন গণতন্ত্রপন্থিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সর্বশেষ গ্রেফতারকৃত ৪৭ জনের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ, বাকিরা নারী। তাদের বয়স ২৩ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে।
উল্লেখ্য, হংকংয়ের রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হংকংয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণেই বেইজিং নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা খুঁজে পেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
সূত্র: বিবিসি
টিএম