সৌদি আরবে ইরানের হামলার আশঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মিত্রদের সতর্কতা
সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থাপনা এবং ইরাকের ইরবিলে ইরান হামলা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছে রিয়াদ। সৌদি আরবের এই হামলার আশঙ্কার পর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সৌদি, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানজুড়ে হিজাববিরোধী যে বিক্ষোভ চলছে, তা থেকে মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সৌদি আরবে হামলা চালাতে পারে তেহরান।
হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি নামের এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। এর তিনদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহসা আমিনি।
কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলের এই তরুণীর মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে হিজাববিরোধী বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে। তখন থেকে প্রায় প্রত্যেক দিন দেশটির হাজার হাজার নারী ইরানের ক্ষমতাসীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাস্তায় নেমে হিজাববিহীন অবস্থায় বিক্ষোভ করছেন।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, হুমকির মাত্রা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন এবং মার্কিন কর্মকর্তারা সৌদি আরবের কর্মকর্তাদের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন।
তবে সৌদি আরবের কর্মকর্তাদের পাঠানো গোয়েন্দা তথ্যের ব্যাপারে বিস্তারিত কোনও তথ্য সরবরাহ করেননি হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা। গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে অব্স্থানরত সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনী উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।
এদিকে, দেশজুড়ে হিজাববিরোধী আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং ইসরায়েল ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইরান।
গত মাসে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডার দেশটিতে চলমান বিক্ষোভের সংবাদ পরিবেশনের লাগাম টানতে প্রকাশ্যে সৌদি আরবকে সতর্ক করে দেন।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর গত ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইরানে নজিরবিহীন বিক্ষোভ চলছে। সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর হাজার হাজার মানুষের এই বিক্ষোভে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও বিক্ষোভ কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইরানের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, প্রধান প্রধান সড়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় এই বিক্ষোভের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া দেশটির বিচার বিভাগ ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনেছে।
এসএস