যুদ্ধ শরণার্থীরা এখনই দেশে ফিরে আসুক, চায় না ইউক্রেন
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর লাখ লাখ মানুষ পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এসব শরণার্থীদের অনেকে এখনও ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে বসবাস করছেন। যুদ্ধের তীব্রতা কমায় অনেকে আবার নিজ ভূখণ্ডে ফিরে যাওয়ার কথাও চিন্তা করছেন।
তবে এসব শরণার্থী এখনই দেশে ফিরে আসুক, তা চায় না খোদ ইউক্রেনই। দেশটি বলছে, আগামী বসন্তের আগে শরণার্থীদের দেশে ফিরে আসা উচিত নয়। বুধবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে করে ইউক্রেনজুড়ে দেখা দিয়েছে লোডশেডিং ও ব্ল্যাকআউট। এতে করে আসন্ন শীত মৌসুমে আরও দুর্ভোগে পড়তে পারেন সাধারণ ইউক্রেনীয়রা।
আর তাই ইউক্রেনের সরকার বলছে, রাশিয়ার দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর জ্বালানি ব্যবস্থার ওপর চাপ কমাতে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের আগামী বসন্ত মৌসুম পর্যন্ত দেশে ফিরে আসা উচিত নয়।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নেটওয়ার্কগুলো চাপ মোকাবিলা করতে পারবে না। আপনারা দেখুন রাশিয়া কি করছে। আমাদের সবাইকে শীত থেকে বাঁচতে হবে।
ভেরেশচুক আরও বলেন, তিনি চান ইউক্রেনীয়রা আগামী বসন্তে দেশে ফিরে আসুক। তবে আপাতত ইউক্রেনে ফিরে আসা থেকে বিরত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ (এখানকার) ‘পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে’। তার ভাষায়, ‘যদি সম্ভব হয়, আপাতত বিদেশে থাকুন।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য আগেই বলেছেন, রুশ বিমান হামলায় তার দেশের জ্বালানি খাতের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী বছরের ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রত্যাশিত বাজেট ঘাটতি মেটাতে জরুরিভাবে সাহায্যের জন্য বিশ্বের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, আগামী বছর ইউক্রেনের টিকে থাকার জন্য প্রতি মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে এবং রুশ সামরিক বাহিনীর বোমাবর্ষণ আরও তীব্র হলে এই অংক গিয়ে ঠেকবে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভের ডেপুটি মেয়র সের্হি কিরাল গত শনিবার বিবিসিকে বলেছেন, রাশিয়ার কৌশল ছিল শীতের আগে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং যুদ্ধকে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে আরও বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া।
বিবিসি বলছে, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ আক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। সাম্প্রতিক এই হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে চেরকাসি অঞ্চল, রাজধানী কিয়েভের দক্ষিণ-পূর্বের এলাকা এবং আরও পশ্চিমে খমেলনিটস্কি শহরও রয়েছে।
এছাড়া রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলে একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধে মাইন বসানোর জন্য গত শুক্রবার রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেন, কাখোভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ধ্বংস হলে লাখ লাখ মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে।
অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ ওই বাঁধটি উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা অস্বীকার করে রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেন সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে লাখ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যান। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে রাশিয়াসহ ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন দেশে ইউক্রেন থেকে প্রায় ৭৭ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়েছেন।
টিএম