মাও সেতুংয়ের পর চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা হচ্ছেন শি জিনপিং
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে গতকাল শুরু হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস। পাঁচ বচর পর এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ কংগ্রেসের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তৃতীয় মেয়াদের জন্য পার্টির নেতা হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর চীনের সাত দশকের ইতিহাসে মাও সেতুং ছাড়া আর কোনো নেতা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হিসেবে এত দীর্ঘ সময় নেতৃত্বে থাকেননি।
শি জিনপিং এখন চীনের তিনটি সর্বাধিক ক্ষমতাধর পদে আছেন। এগুলো হলো- চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক, দেশটির সশস্ত্রবাহিনীর চেয়ারম্যান এবং প্রেসিডেন্ট।
চীনের প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষেত্রে আগে এমন নিয়ম ছিল যে এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। চীনের সংস্কারক নেতা দেং শিয়াও পিং এটা করেছিলেন এই জন্য যেন চীনে আর কখনো মাও সেতুংয়ের মতো একক নেতৃত্বের উত্থান না হয়।
কিন্তু শি জিনপিংএর উত্থানের পর ২০১৮ সালে দেশটির রাবার-স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট এ নিয়ম বিলোপ করে। ফলে কার্যত শি জিনপিং যতদিন খুশি প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন।
শি জিনপিংয়ের পক্ষে যেসব প্রচারণা চালানা হয় সেখানে বলা হয় একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বনেতাদের মধ্যে শি জিনপিং একমাত্র ব্যতিক্রম। কারণ তিনি ক্ষেতে কৃষি মজুর হিসেবে কাজ করেছেন, গুহায় থেকেছেন। পাঁচ দশক আগে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের তুমুল হট্টগোলের সময় ১৫ বছর বয়সী শি জিনপিং এক প্রত্যন্ত গ্রামে কঠিন জীবন যাপন করতেন।
এর উল্টো বক্তব্যও আছে, যেখানে বলা হয় তিনি হচ্ছেন চীনের ‘প্রিন্সলিং’ প্রজন্মের একজন। কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদে আসীন ছিলেন এমন নেতাদের সুবিধাভোগী সন্তানদের ‘প্রিন্সলিং’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
শি জিনপিং যে চীনের প্রভাবশালী এক কমিউনিস্ট নেতার সন্তান হিসেবে এক সময় অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, সেটাকে আড়াল করে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় তার কষ্টসাধ্য জীবনের ছবিকেই তুলে ধরার চেষ্টা দেখা যায় চীনে।
শি জিনপিং এর বাবা ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একজন। কিন্তু ষাটের দশকে চেয়ারম্যান মাও সেতুং যখন দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন, তার শিকার হন শি জিনপিং এর বাবা। তাকে জেলে পাঠানো হয়, তার পরিবারকে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়।
তবে একসময় আবার রাজনীতিতে নর্বাসিত হন জিনপিংয়ের বাবা। শি জিন পিং এর বয়স তখন ২৫। ততদিনে তিনিও পার্টিতে জড়িয়েছেন। বাবার সুবাদে পার্টিতে খুব দ্রুত উন্নতিও করতে থাকেন।
এক সময় গড়ে তোলেন নিজের ক্ষমতা বলয়। সত্তরের দশকের শেষ দিকে তিনি ছিলেন পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন অফিসার। তবে এখন তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনেতাদের একজন।
এনএফ