গাম্বিয়ায় শিশুমৃত্যু: ভারতে মেইডেন কোম্পানির সিরাপ উৎপাদন বন্ধ

ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালের কাশির সিরাপ পানের পর গাম্বিয়ায় ৬৯ শিশুর মৃত্যুর জেরে ওই কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানা রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয় ও ওষুধ কারখানা হরিয়ানা রাজ্যের সোনেপাত শহরে। রয়টার্সকে অনিল ভিজ বলেন, দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে নির্দেশ আসার পর মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের বিষয়ে তদন্তে নেমেছিল ভারতের অন্যতম কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের (সিডিএসসিও) হরিয়ানা রাজ্যশাখা এবং রাজ্যসরকারের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষ। তদন্তে মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধ উৎপাদন সংক্রান্ত ১২টি অনিয়ম দেখতে পায় এ দুই কর্তৃপক্ষ সংস্থা।
‘সিডিএসসিও এবং খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বিভাগের রিপোর্ট পাওয়ার পর মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কোম্পানি কর্তৃপক্ষকেও নোটিশ দিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে,’ রয়টার্সকে বলেন অনিল ভিজ।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত সপ্তাহে ভারতের বাজার থেকে মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের যাবতীয় ওষুধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুরোধে (ডব্লিউএইচও) নেওয়া হয়েছিল সেই পদক্ষেপ।
সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে কিডনি বিকল হয়ে ৬৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত এই শিশুদের সবার বয়স ৫ বছরের মধ্যে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই শিশুদের মৃত্যুর জন্য ৪টি কাশির সিরাপ দায়ী। এসব সিরাপের নাম—প্রোমেথাজিন ওরাল সলিউশন বিপি, কফিক্সমেলিন বেবি কফ সিরাপ, ম্যাকফ বেবি সিরাপ এবং ম্যাগ্রিপ এন কোল্ড সিরাপ। মেইডেন ফার্সাসিউটক্যালসেই তৈরি করা হয়েছে এসব সিরাপ।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ ওঠা এই চার সিরাপ পরীক্ষার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিটি সিরাপেই অতিরিক্ত বা ‘অগ্রহনযোগ্য’ মাত্রায় ডায়েথিলিন গ্লাইকল ও এথিলিন গ্লাইকল নামের দুটি রাসায়নিক যৌগের ‘অগ্রহনযোগ্য’ মাত্রার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সংস্থার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, যে পরিমাণ ডায়েথিলিন গ্লাইকল ও এথিলিন গ্লাইকল এসব সিরাপে পাওয়া গেছে, তা শিশুদের কিডনির স্থায়ী ক্ষতিসাধনের জন্য যথেষ্ট।
ডব্লিউএইচওর রিপোর্টের পরই গাম্বিয়া ও ভারতে তদন্ত শুরু হয় এ বিষয়ে। তারই ধারবাহিকতায় আজ বুধবার মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের যাবতীয় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করা হলো।
এমনিতে ডায়েথিলিন গ্লাইকল ও এথিলিন গ্লাইকল মূলত শিল্প কারখানায় উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু দামে সস্তা হওয়ায় উপমহাদেশের অনেক ওষুধ কোম্পানি খাবার উপযোগী গ্লিসারিনের পরিবর্তে এই দু’টি রাসায়নিক যৌগ ব্যবহার করে।
সরকারি পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানতে বুধবার মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহী নরেশ কুমার গয়ালের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে গত সপ্তাহে নরেশ বলেছিলেন গাম্বিয়ার এই ঘটনায় কোম্পানির দায় কতখানি, তা খতিয়ে দেখছেন তারা।
মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এই কোম্পানির মোট ৩টি কারখানা রয়েছে। সবগুলোই ভারতে এবং প্রতি বছর এসব কারখানা ২২ লাখ বোতল সিরাপ, ৬০ কোটি ক্যাপসুল, ১ কোটি ৮০ লাখ টিকা ও ৩ লাখ অয়েন্টমেন্ট (মলম) টিউব প্রস্তুতে সক্ষম।
ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে ওষুধ রপ্তানি করে থাকে মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস।
এসএমডব্লিউ