পশ্চিমা দেশগুলো পাকিস্তানকে বেশি গুরুত্ব দেয়, অভিযোগ ভারতের
পশ্চিমা দেশগুলো পাকিস্তানকে বেশি গুরুত্ব দেয় বলে অভিযোগ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। একইসঙ্গে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালানোর পরও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টিও সমর্থন করেছেন তিনি।
জয়শঙ্করের দাবি, মস্কোর সাথে নয়াদিল্লির দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ভারতের স্বার্থকে ভালোভাবে রক্ষা করেছে। ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার অধিগ্রহণের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ ভোটাভুটির আগে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, রাশিয়ার বিপরীতে পশ্চিমা দেশগুলো অতীতে ভারতকে কোনো অস্ত্র সরবরাহ করেনি। বরং নয়াদিল্লির পরিবর্তে পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের প্রতিবেশী ‘সামরিক একনায়কত্বের’ (পাকিস্তানের) পাশে থাকাকেই বেছে নিয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বরাবরই সমালোচনায় মুখর। তবে পশ্চিমাদের সমালোচনা মোকাবলিায় জয়শঙ্করের এই স্পষ্ট বক্তব্য এবারই প্রথম নয়। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওংয়ের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর জয়শঙ্করের এই ধরনের মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে যুক্ত করার পর রাশিয়ার ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া।
সোমবার অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওংয়ের সঙ্গে ১৩ তম ‘ফরেন মিনিস্টার্স ফ্রেমওয়ার্ক ডায়ালগ’-এ অংশ নেন জয়শংকর। পরে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের নাম না নিয়ে ভারতের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরে রাশিয়ার তৈরি অনেক অস্ত্রই আমরা ব্যবহার করি। এমনটা করার যথেষ্ট কারণ আছে। কয়েক দশক পশ্চিমা দেশগুলো ভারতকে কোনো অস্ত্র দেয়নি। আমাদের প্রতিবেশী দেশের (পাকিস্তান) সেনাশাসকরাই পশ্চিমাদের বেশি পছন্দ ছিল।’
জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমরা সবাই আমাদের যা আছে তা নিয়েই পরিস্থিতির মোকাবিলা করি। আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করি। এসব বিচার-বিশ্লেষণে আমাদের ভবিষ্যৎ স্বার্থের পাশাপাশি আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি উভয়ই প্রতিফলন করে। এবং আমার ধারণা, বর্তমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের জন্য কিছু শিক্ষা রয়েছে এবং আমি নিশ্চিত যে সামরিক বাহিনীতে আমার অত্যন্ত পেশাদার সহকর্মীরা এটি খুব মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করবেন।’
ভারতে সামরিক সরঞ্জামের প্রধান একটি সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া এবং ভারতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপভ সম্প্রতি বলেছেন, রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনের সাথে বিরোধের কারণে ভারতে মস্কোর প্রতিরক্ষা সরবরাহে বাধা দেবে না। এছাড়া মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের মধ্যে কী ধরনের অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে তা নিয়ে দুই দেশ আলোচনা করছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে মস্কোর কাছ থেকে জ্বালানি এবং অস্ত্র কেনা নিয়ে সারা বিশ্বেই নানা বিতর্ক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
ভারতের এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমরা বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের ভবিষ্যৎ স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। জাতীয় স্বার্থই সব সময় আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পায়।’
উল্লেখ্য, রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনছে ভারত। মার্কিন আইন অনুযায়ী, এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও দিল্লির পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করা হচ্ছে।
তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ‘কাউন্টারিং আমেরিকা’স অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাংশনস অ্যাক্ট’ বা সিএএটিএসএ নামক একটি আইনের অধীনে রাশিয়ার কাছ থেকে কোনো দেশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনলে সেই দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে ওয়াশিংটন।
টিএম