রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার ব্যাপক মিসাইল হামলা
ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক মিসাইল হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ হামলাকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা করার পর সোমবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে রাজধানী কিয়েভসহ পুরো ইউক্রেনে এই হামলা শুরু হয়েছে।
মূলত ক্রিমিয়ার সেতুতে হামলা ও বিস্ফোরণের জবাবে রাশিয়া প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রিমিয়ার সেতুতে হওয়া বিস্ফোরণকে সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা করার পর রাশিয়া সোমবার সকালে আপাত প্রতিশোধমূলক হামলায় ইউক্রেনজুড়ে শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ করেছে।
রয়টার্স বলছে, সোমবার সকালে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধের প্রথম দিকে রাশিয়া এটি দখল করার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করার পর থেকে সোমবার ইউক্রেনের রাজধানীতে হওয়া এটিই সবচেয়ে তীব্র হামলা।
রাজধানী কিয়েভের পাশাপাশি ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভ, টারনোপিল ও জাইটোমির এবং মধ্য ইউক্রেনের ডিনিপ্রো ও ক্রেমেনচুকেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
টেলিগ্রাম ম্যাসেজিং অ্যাপে দেওয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘তারা (রাশিয়া) আমাদের ধ্বংস করার এবং পৃথিবী থেকে আমাদের মুছে ফেলার চেষ্টা করছে... জাপোরিঝিয়াতে নিজেদের বাড়িতে ঘুমন্ত লোকদের ধ্বংস করছে। ডিনিপ্রো এবং কিয়েভে কাজ করতে যাওয়া লোকদের হত্যা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিমান হামলার সাইরেন ইউক্রেনজুড়ে কমছে না। সর্বত্রই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করছে। দুর্ভাগ্যবশত, সেখানে হতাহত হয়েছে।’
এদিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বেলগোরোড অঞ্চলে বিস্ফোরণের কথা জানিয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
রয়টার্স বলছে, কিয়েভের ব্যস্ততম সড়ক জংশনগুলোর একটিতে মিসাইল হামলার পর একটি বিশাল গর্ত দেখা দিয়েছে। সেখানে গাড়ি ধ্বংস হয়েছে, ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জরুরি কর্মীরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। গর্তের কাছে দু’টি গাড়ি এবং একটি ভ্যান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া হামলার পর কিয়েভের প্রধান তারাস শেভচেঙ্কো ইউনিভার্সিটির ভবনের জানালা উড়ে গেছে। ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ড সৈন্যরা সম্পূর্ণ যুদ্ধের সরঞ্জামে এবং অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে কিয়েভের একটি শিক্ষা ইউনিয়ন ভবনের বাইরে অবস্থান করতে দেখা যায়।
সোশ্যাল মিডিয়াতে দেওয়া এক পোস্টে কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেছেন, ‘রাজধানী রাশিয়ান সন্ত্রাসীদের আক্রমণের মধ্যে রয়েছে! রুশ ক্ষেপণাস্ত্র শহরের কেন্দ্রস্থলে (শেভচেঙ্কিভস্কি জেলায়) এবং সোলোমিয়ানস্কি জেলায় বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। বিমান হামলার সাইরেন বাজছে এবং হামলার হুমকি অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিয়েভের কেন্দ্রীয় রাস্তাগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অবরুদ্ধ করে দিয়েছে। উদ্ধারকারী পরিষেবাগুলো কাজ করছে।’
এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক প্রধান বলেছেন- সোমবার ইউক্রেনজুড়ে হামলার সময় অন্তত ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একজন সহকারীর মতে, রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত আটজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন এবং আরও ২৪ জন আহত হয়েছেন। শহরের মেয়র বলেছেন, সোমবারের হামলায় ‘গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতেও’ আঘাত করা হয়েছে।
খারকিভের মেয়র বলেছেন, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শহরের একটি জ্বালানি অবকাঠামোতে আঘাত করেছে। এর ফলে সেখানে বিদ্যুৎ এবং পানি বিভ্রাট সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় টারনোপিল এবং লভিভেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে বলে উভয় প্রদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। লভিভের মেয়র বলেছেন, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর শহরের কিছু অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া সুমি, জাইটোমির, খমেলনিতস্কি এবং কিরোভোহরাদ অঞ্চলেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
টিএম