পাকিস্তানকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিচ্ছে সরকার : ইমরান খান
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, দেশের বর্তমান সরকার পাকিস্তানকে কিনারায় ঠেলে দেবে। সরকারকে আক্রমণের পাশাপাশি তিনি আবারও দেশটিতে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে ইমরান খান বলেন, ‘সমস্যা হল এই সরকার পাকিস্তানকে কিনারায় ঠেলে দেবে। তাহলে কি অর্থনীতি ভেঙে পড়বে এবং আমরা দেউলিয়া হয়ে যাব? আসলে এই সমস্যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
আগে থেকেই ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানের অর্থনীতি চলতি গ্রীষ্মের নজিরবিহীন এক বন্যায় আরও বিপর্যস্ত হয়েছে। সম্প্রতি দেশটিতে আঘাত হানা আকস্মিক বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে ধারণা করছে দেশটির সরকার।
ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং মুদ্রার মানের পতন মোকাবিলায় রীতিমতো লড়াই করছে পাকিস্তান। এর মাঝে বন্যায় এক হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি এবং বাড়িঘর, রাস্তা ও রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বন্যার কারণে পাকিস্তানে দারিদ্র্যের হার আড়াই থেকে ৪ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেতে পারে। ২২ কোটি মানুষের এই দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যে দারিদ্রসীমার নিচে রয়েছেন।
বুধবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বন্যাকবলিত পাকিস্তানের জন্য আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। গত আগস্টের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে।
ইমরান খান বলেছেন, পরবর্তী সরকারের জন্য পাকিস্তানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড় করানো চ্যালেঞ্জের হবে। আর দেশটির পরবর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী বলে জানিয়েছেন।
ক্রিকেট তারকা থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বনে গিয়েছিলেন ইমরান খান। গত এপ্রিলে দেশটির সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। ইমরান খান বলেছেন, ‘আমি জানি না আমরা কোন পর্যায়ে অর্থনীতিকে পাবো। তবে আমি খুব গুরুতর পরিস্থিতির শঙ্কা করছি; যা ২০১৮ সালে আমরা যে ধরনের অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়েছিলাম তার চেয়ে অনেক খারাপ হবে।
‘আমাদের ২০ শতাংশ টেক্সটাইল শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের গাড়ি ও মোবাইল ফোন শিল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ বন্ধ রয়েছে। বস্ত্রশিল্পে ধর্মঘট চলছে, কৃষকরা ধর্মঘটে গেছেন।’
তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যত তাড়াতাড়ি হবে, তত দ্রুতই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে। পাকিস্তানের জন্য সময়ই এখন মূল বিষয়।
ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আগাম নির্বাচনের দাবিতে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সমাবেশ করেছেন। আগামী বছরের অক্টোবরে দেশটির পরবর্তী নির্বাচনের কথা থাকলেও তিনি আগাম নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। যদিও দেশটির ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফ নেতৃত্বাধীন সরকার বলেছে, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি ইসলামাবাদে আবারও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে লং মার্চের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এর আগে, গত মে মাসে একই ধরনের লং মার্চ করেছিলেন তিনি। তবে সেই সময় দেশটির সরকার লং মার্চ ঠেকাতে পিটিআই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান পরিচালনা করে।
পুলিশের সাথে সংঘর্ষে পিটিআইয়ের অন্তত ৫ জন সমর্থকেরও প্রাণহানি ঘটে। লং মার্চের ব্যর্থতা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, তিনি সরকারের কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, তখন বিরোধীদের তিনটি মিছিলের অনুমতি দিয়েছিলাম। আমরা কখনো তাদের বাধা দিইনি। কোনো হয়রানি বা পুলিশের হস্তক্ষেপ ছিল না। কিন্তু আমরা মিছিলে গিয়ে যে দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছি তা নজিরবিহীন।
৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিক তার পরবর্তী প্রতিবাদ মিছিলের তারিখ জানাতে অস্বীকার করেছেন।
সূত্র: আলজাজিরা।
এসএস