‘রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আত্মহত্যা করা উচিত’
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আত্মহত্যা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনে রুশ দখলকৃত অঞ্চলে মস্কোর নিযুক্ত একজন কর্মকর্তা। তার দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যর্থতার লজ্জার কারণে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আত্মহত্যা করার কথা বিবেচনা করা উচিত।
ক্ষমতা কাঠামোর কেন্দ্রে থাকা শীর্ষস্থানীয় রাশিয়ান নেতাদের জন্য এই ধরনের আহ্বান বেশ আশ্চর্যজনক এবং প্রকাশ্য অপমান। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে টানা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধের পরেও রাশিয়ার মৌলিক লক্ষ্যগুলো এখনও অর্জিত হয়নি। আর এই পরিস্থিতিতেই রাশিয়ান বাহিনী সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত হয়েছে। এতে করে প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ায় আংশিক সেনা সমাবেশ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আত্মহত্যা করা উচিত বলে মন্তব্য করা রুশ ওই কর্মকর্তার নাম কিরিল স্ট্রেমাসভ। তিনি ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলের রাশিয়ান-নিযুক্ত উপ-প্রধান। ইউক্রেনীয় এই অঞ্চলটি সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
রয়টার্স বলছে, বৃহস্পতিবার চার মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন সংযুক্ত খেরসন অঞ্চলের রাশিয়ান-নিযুক্ত উপ-প্রধান কিরিল স্ট্রেমাসভ। সেখানে সম্ভাব্য সমস্যাগুলো আগে থেকেই বুঝতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য মস্কোর ‘জেনারেল এবং মন্ত্রীদের’ প্রকাশ্যে নিন্দা করেন তিনি।
ভিডিওতে ৪৫ বছর বয়সী স্ট্রেমাসভ বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, অনেকে বলে: যদি তারা প্রতিরক্ষামন্ত্রী হতেন যিনি (ইউক্রেনে) এমন পরিস্থিতির অনুমতি দিতেন, তবে তারা অফিসার হিসাবে নিজেই নিজেকে গুলি করতে পারত। কিন্তু আপনি জানেন, ‘অফিসার’ শব্দটি অনেকের কাছেই বোধগম্য শব্দ নয়।’
রয়টার্স বলছে, পুতিনের সামরিক প্রধানদের বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রকাশ্য এবং অপমানজনক নিন্দা রাশিয়ায় অত্যন্ত বিরল হলেও ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে সিরিজ ব্যর্থতার কারণে পুতিনের কিছু মিত্র রুশ শীর্ষ জেনারেলদের তিরস্কার করতে ছাড়ছেন না।
রাশিয়ার চেচেন অঞ্চলের নেতা রমজান কাদিরভ এবং ভাড়াটে যোদ্ধাদের ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন সম্প্রতি রুশ জেনারেলদের উপহাস করে বলেছেন, সামরিক বাহিনী স্বজনপ্রীতিতে পরিপূর্ণ এবং সিনিয়র অফিসারদের তাদের পদ থেকে বাদ দেওয়া উচিত। এমনকি তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য খালি পায়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন এবং ২০১২ সালে এই পদে নিযুক্ত হন। তাদের সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিল যে- এই দু’জন ব্যক্তি নিয়মিতভাবে শোইগুর নিজের এলাকা বলে পরিচিত টুভার বন ও পাহাড়ে একসঙ্গে ছুটি কাটাতেন।
অবশ্য পুতিনের মিত্রের সর্বশেষ এই সমালোচনাটি সমন্বিত ছিল কিনা তা পরিষ্কার নয়। তবে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ এই সন্ধিক্ষণে পুতিনের জন্য একটি সমস্যা তৈরি করতে পারে। আর তা হলো- নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রকে বরখাস্ত করা এবং সামরিক বাহিনী ব্যর্থ হয়েছে এটা স্বীকার করা, অথবা শোইগুকে তার পদেই বহাল রাখা এবং নিজেকে দোষ দেওয়ার ঝুঁকি নেওয়া।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য লিখিত অনুরোধের কোনো জবাব দেয়নি।
অনেক রাশিয়ান জাতীয়তাবাদী বারবারই শোইগু এবং তার শীর্ষ জেনারেলদের দুর্বল পরিকল্পনা ও অপ্রতুল রসদ থেকে শুরু করে ধ্বংসাত্মক পুরোনো কৌশল এবং পুতিনের অধীনে ব্যাপক বিনিয়োগ সত্ত্বেও তথ্য যুদ্ধে হেরে যাওয়ার জন্য সমালোচনা করেছেন।
রাশিয়ার দুই অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এখন পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি থেকে স্টেট ডুমার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত সপ্তাহে তারা রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসততার অভিযোগ এনে ব্যাপক সমালোচনা করেন।
যদিও বেশিরভাগই সমালোচকরা কিয়েভ, খারকিভ, লাইম্যান এবং খেরসন অঞ্চলের মূল লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার জন্য শোইগুর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে থাকেন।
অবশ্য মস্কোর ‘অযোগ্য সামরিক নেতাদের’ সমালোচনার বিপরীতে স্ট্রেমাসভ তাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা সৈন্যদের বীরত্বের প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলছেন, ‘আসুন এটি বলি: প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র মন্ত্রী, জেনারেল, দুর্নীতিবাজ লুটেরা এবং অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের নিয়েই গঠিত নয়, সেই সমস্ত বীরদের নিয়েও এই মন্ত্রণালয় গঠিত যারা রাশিয়াকে রক্ষা করতে তাদের জীবন দিয়েছে।’
এমনকি স্ট্রেমাসভ চেচেন নেতা কাদিরভের প্রশংসাও করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি অনুভব করেছেন যে মস্কো শিগগিরই বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করবে।
তার ভাষায়, ‘আমরা সবকিছু শৃঙ্খলাবদ্ধ করব এবং বিশ্বাস করুন, সবকিছু আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’
টিএম