ইউক্রেনকে সরাসরি সহায়তা করতে বাধ্য নয় ন্যাটো : জার্মানি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গত আট মাস ধরে ইউক্রেনকে বিভিন্ন সময়ে সমরাস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অ্যালায়েন্স (ন্যাটো)।
কিন্তু জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জার্মানি বলেছে, এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে সরাসরি সহায়তা করতে ন্যাটো বাধ্য নয়; বরং ন্যাটো এখন এই যুদ্ধ এড়িয়ে চলতে চায়।
শনিবার জার্মানভিত্তিক সাময়িকী ডের স্পিগেলের তারুণ্য সংস্করণ ডেইন স্পিগেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন ন্যাটোর জার্মান প্রতিনিধি রুডিগের কোয়েনিগ। সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল— ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ সম্প্রতি নিজেদের সীমানভুক্ত করেছে রাশিয়া এবং মস্কো ইতোমধ্যে এই যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছে— এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা ন্যাটোর রয়েছে কি না।
উত্তরে কোয়েনিগ বলেন, ‘না, আমাদের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। যদি ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হতো, সেক্ষেত্রে জোটের সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকত; কিন্তু যেহেতু ইউক্রেন এখনও ন্যাটোর সদস্যপদ পায়নি, তাই এখন এই যুদ্ধে ন্যাটোর সরাসরি অংশগ্রহণের অর্থ হলো ন্যাটো চুক্তির ৫ নম্বর ধারার লঙ্ঘণ। জেনেশুনে আমরা চুক্তির ধারা লঙ্ঘণ করতে পারি না।’
‘আরও একটি ব্যাপার হলো, ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সরাসরি সদস্য হতো— তাহলেও এই যুদ্ধে জোট সরাসরি অংশ নিত কি না সন্দেহ। কারণ নীতিগতভাবে আমরা সবাই এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার পরিবর্তে এটি থামাতে চাইছি।’
ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান ও দেশটিতে মার্কিন অর্থায়নে সামরিক স্থাপনা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রায় দু’মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করতে রুশ বাহিনীকে নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
অভিযানের গত আট মাসে খেরসন, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক ও ঝাপোরিজ্জিয়াসহ ইউক্রেনের বেশ কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ বাহিনী। তারপর ৩০ সেপ্টেম্বর মস্কোতে এই চার প্রদেশকে রাশিয়ার প্রদেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন পুতিন। সোমবার রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমাতেও জনপ্রতিনিধিরা ভোটের মাধ্যমে এই চার প্রদেশের রুশ ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দেন।
শতকরা হিসেবে এই চার প্রদেশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট আয়তনের ১৫ শতাংশ।
এদিকে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ রাশিয়া’স সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিভিন্ন রাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দিয়ে সম্প্রতি বলেছেন, যদি প্রয়োজন হয়— রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে পিছ পা হবে না।
এ বিষয়ে ন্যাটোর অবস্থান জানতে চাইলে জার্মানির দূত সরাসরি তার উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ক্রিমিয়া উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া দখল করেছে, সেসব অঞ্চল যদি ইউক্রেন নিজেদের বলে পুনরায় দাবি করে— আমরা মনে করি ইউক্রেনের সেই দাবি ন্যায্য।’
‘আর রাশিয়া যদি সত্যিই এ ধরনের (পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার) পদক্ষেপ নেয়, সেটি খুবই অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ হবে।’
এদিকে জানা গেছে, ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জরুরিভিত্তিতে ইউক্রেনকে সদস্য করে নিতে ন্যাটোতে আবেদনও জমা দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ন্যাটোর ৩০ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে মাত্র ৯টি ইউক্রেনকে জোটের সদস্যপদ দেওয়ার পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
সূত্র: আরটি
এসএমডব্লিউ