পি কে হালদারকে মার্চের মধ্যে ফেরত দেবে ভারত: ইডি
ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলার মূল অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ফেরত দেওয়া হতে পারে। বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বলেছে, বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় আগামী মার্চের মধ্যে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে পি কে হালদারকে ফেরত দেবে ভারত।
এদিকে, বৃহস্পতিবার পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে ফের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতার একটি বিশেষ আদালত। আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের পলাতক এই আসামিদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কলকাতার সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের চার নম্বর আদালতের বিচাররক বিদ্যুৎকুমার রায় পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের জেল হেফাজতের এই নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে পি কে হালদার ও তার ৫ সহযোগীকে আদালতে তোলা হয়। পরে আদালতের বিচারক শুনানি শেষে অভিযুক্তদের আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
গত ১৪ মে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন : বন্দুকের গুলি আর পাচার করা টাকা ফিরে আসে না!
পরে দফায় দফায় জেল হেফাজত বাড়িয়ে অর্থ পাচার মামলার এই আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে, সর্বশেষ গত ১০ আগস্ট পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের কলকাতার বাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়েছিল।
সেই সময় ইডির কর্মকর্তারা আদালতকে বলেছিলেন, ভারতে অবৈধভাবে বসবাস ও ব্যবসা পরিচালনাকারী বাংলাদেশি নাগরিক পি কে হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদে বিপুল সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। প্রাথমিকভাবে ইডি ভারতে তার ১৫০ কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভারতের তদন্তকারী সংস্থা ইডি বলেছে, আগামী বছরের মার্চের মধ্যে পি কে হালদারকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ইডি বলেছে, পি কে হালদার ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের একাধিক রাজ্যে বিপুল সম্পদ করেছেন। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থপাচারের মাধ্যমে সেখানে একাধিক অভিজাত বাড়িসহ বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলেও খোঁজ পেয়েছে ইডি।
দুর্নীতি দমন কমিশন ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, পলাতক পি কে হালদার তার নামে অবৈধ উপায়ে এবং ভুয়া কোম্পানি ও ব্যক্তির নামে প্রায় ৪২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন।
অবৈধ সম্পদের অবস্থান গোপন করতে ১৭৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করেন পি কে হালদার। তিনি এসব অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা জমা রাখেন। পাশাপাশি এসব অ্যাকাউন্ট থেকে তার নামে ও বেনামে আরও ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেন। দুদকের তথ্য বলছে, পি কে হালদার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অর্থপাচার মামলায় পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য শুরু
এদিকে, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
প্রথম দিন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক সালাউদ্দিন। বাদীর জেরার জন্য আগামী ১৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আরও পড়ুন : টাকা পাচারকারীর তালিকাটা অন্তত মানুষ জানুক
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
পি কে হালদার ছাড়াও এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন, পিকে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রীতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায়, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, অবন্তিকা বড়াল, শঙ্খ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধা। তাদের মধ্যে অবন্তিকা, শঙ্খ, সুকুমার ও অনিন্দিতা কারাগারে আছেন।
এসএস