ভারতের চাল রপ্তানি কমছে ২৫%, দাম বাড়ার শঙ্কা
নয়াদিল্লির বিধিনিষেধ ক্রেতাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সরবরাহকারীদের কাছে যেতে বাধ্য করায় চলতি বছরে ভারতের চাল রপ্তানি প্রায় এক চতুর্থাংশ কমতে পারে। ভারতের রপ্তানি বিধিনিষেধে এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী সরবরাহকারীরা এখন নয়াদিল্লির তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে চাল বিক্রি করছে।
বুধবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতে বর্ষা মৌসুমে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় ধান চাষ হ্রাস পেয়েছে। যে কারণে দেশীয় বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম শস্য রপ্তানিকারক ভারত গত সপ্তাহে ভাঙা চালের রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের চালের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি।
ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় ইতোমধ্যে এশিয়ার বাজারে এই খাদ্যশস্যের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি সপ্তাহে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে উদ্বেগে রয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
ভারতের চাল রপ্তানিকারকদের সংগঠন দ্য রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টিআরইএ) প্রেসিডেন্ট বি. ভি. কৃষ্ণা রাও রয়টার্সকে বলেছেন, নতুন করে আরোপ করা শুল্ক ভারতীয় চালের দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে চাল রপ্তানির পরিমাণ কমপক্ষে ৫০ লাখ টন কমে যাবে।
আরও পড়ুন: বৈশ্বিক চালের ‘নাটাই’ কেন ভারতের হাতে?
এর ফলে চলতি বছর ভারতের চাল রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ কোটি ৬২ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের চাল রপ্তানি রেকর্ড ২ কোটি ১২ লাখে পৌঁছেছে। ভারতের এই চাল রপ্তানি বিশ্বের বৃহত্তম শস্য রপ্তানিকারক চার দেশ— থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট রপ্তানির চেয়েও বেশি।
কৃষ্ণা রাও বলেছেন, নয়াদিল্লি কেবল সাদা চালের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে; যা কিছু ক্রেতাকে রপ্তানি শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় সিদ্ধ চাল কেনায় উৎসাহিত করতে পারে।
ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভারতের চাল রপ্তানি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টনে পৌঁছেছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ৮৩ লাখ টনের তুলনায় বেশি।
নয়াদিল্লি-ভিত্তিক ভারতের চাল রপ্তানিকারক কোম্পানি ভাইএক্সপোর্টের পরিচালক দেব গর্গ বলেছেন, চলতি অর্থবছরের এখন পর্যন্ত প্রচুর চাল রপ্তানি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে আগামী কয়েক মাসে চালের চালান দ্রুত কম যাবে বলে আমরা আশা করছি।
দেশটির চাল কোম্পানি ওলাম ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট নীতিন গুপ্তা বলেছেন, ভারত থেকে চালের রপ্তানি কমে যাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী সরবরাহকারীদের দাম বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করছে আর এটি ভারতীয় চালকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে আলুর কেজি ১০০, পেঁয়াজ ৩০০, টমেটো ৪০০ রুপি
গত সপ্তাহে ভারত চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং অন্যান্য সরবরাহকারীরা সাদা চালের দাম বাড়িয়েছে।
ভারতের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক কোম্পানি সত্যম বালাজির নির্বাহী পরিচালক হিমাংশু আগারওয়াল বলেছেন, সাদা চালের সবচেয়ে সস্তা সরবরাহকারী ছিল ভারত। শুল্ক আরোপ করায় ভারতীয় চালের দাম বাড়বে।
বিশ্বের ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চাল। ২০০৭ সাল ভারত যখন চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে তখন বিশ্ববাজারে এর দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। সেই সময় প্রতি টন চালের দাম বেড়ে প্রায় ১ হাজার ডলারে দাঁড়ায়।
বিশ্বে চীনের পর চালের প্রধান ভোক্তা দেশও ভারত। বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি চালের মার্কেট শেয়ার রয়েছে ভারতের। অভ্যন্তরীণ উচ্চ মজুত আর স্থানীয় বাজারে কম দামের কারণে গত দুই বছর ব্যাপক ছাড়ে চাল বিক্রি করেছে ভারত।
যা এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশকে গমের দামের ঊর্ধ্বগতির সাথে লড়াই করতে সাহায্য করেছে। বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে চাল রপ্তানি করে ভারত। দেশটির চালান হ্রাস পেলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস