নাগোরনো-কারাবাখ: আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ
নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতভর উভয় দেশের সৈন্যদের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলে। মূলত বিতর্কিত অঞ্চল নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের পুরনো শত্রুতা রয়েছে এবং এই বিষয়টি নিয়েই নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে উভয় দেশ।
এদিকে সংঘর্ষের এই বিষয়টি রাশিয়ার বেশ কয়েকটি বার্তাসংস্থা মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে রিপোর্ট করে। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ছয় সপ্তাহের সংঘর্ষে নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল আজারবাইজান। তবে সোমবার রাতভর এই সংঘর্ষে দেশটি তার বাহিনীর মধ্যে হতাহতের কথা স্বীকার করেছে। অবশ্য আর্মেনিয়া ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য উল্লেখ করেনি, তবে বলেছে, আজারবাইজানের সঙ্গে রাতভর সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল।
রুশ বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, আর্মেনিয়ার সরকার বলেছে, তারা রাশিয়ার সাথে একটি সহযোগিতা চুক্তির আহ্বান জানাবে এবং এ বিষয়ে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা ব্লক- ‘কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন’-এর পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে আবেদন করবে তারা।
এদিকে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর পেছনে উভয় পক্ষই একে-অপরকে দায়ী করেছে। আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আজারবাইজান সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কয়েকটি অবস্থান, আশ্রয়কেন্দ্র এবং রিইনফোর্সমেন্ট পয়েন্টে ... আর্মেনিয়ান সেনাবাহিনী মর্টারসহ বিভিন্ন অস্ত্রের মাধ্যমে তীব্র গোলাবর্ষণ করেছে। ফলস্বরূপ, কর্মীদের ক্ষতি এবং সামরিক অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।’
আজারবাইজানীয় বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আর্মেনিয়ান বাহিনী সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা কার্যকলাপে নিয়োজিত ছিল। তারা (আর্মেনিয়া) ওই এলাকায় অস্ত্র আনা-নেওয়া করছিল এবং সোমবার রাতে খনি কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করে।
এতে বলা হয়েছে, আজারবাইজান (আর্মেনিয়ার) ‘সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে লক্ষ্য করে’ জবাব দিয়েছে।
আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে: ‘ব্যাপক গোলাগুলি চলছে - ‘আজারবাইজানের পক্ষ থেকে বড় আকারের উস্কানির’ ফলে তা শুরু হয়েছে। আর্মেনিয়ার সশস্ত্র বাহিনী জবাব দিচ্ছে।’
১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজার ও আর্মেনিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। উভয় দেশই সেসময় সোভিয়েত শাসনের অধীনে ছিল। একপর্যায়ে আর্মেনিয়ান বাহিনী নাগোরনো-কারাবাখের নিকটবর্তী অঞ্চলের কিছু অংশ দখল করে, যা মূলত দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃত।
পরে ২০২০ সালে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে সেসব অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে আজারবাইজান। সেসময় ছয় সপ্তাহের সেই যুদ্ধ রাশিয়ার মধ্যস্ততার মাধ্যমে শেষ হয়। এরপর যুদ্ধের কারণে পালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার বাসিন্দা সেখানে ফিরে আসেন।
এরপর গত প্রায় দুই বছরে নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে উভয় দেশের নেতারা বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন।
উল্লেখ্য, বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী ওই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছিল।
আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে এই ভূখণ্ড ঘিরে দুই দেশের মাঝে শুরু হওয়া যুদ্ধ রাশিয়ার মধ্যস্থতায় বন্ধ হয়। এরপর ওই অঞ্চলে প্রায় ২ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে নাগোরনো-কারাবাখ এবং এর আশপাশের এলাকার বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয় আজারবাইজান। যা আগে আর্মেনিয়া-সমর্থিত বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
২০২০ সালের ওই সংঘাতে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
টিএম