গাড়িতেই ঘর সংসার সাজিয়ে বসেছে ৫ সদস্যের এই পরিবার
ঘর-বাড়ি সব ছেড়েছুড়ে কখনও রাস্তায় থাকার কথা ভেবেছেন? যুক্তরাষ্ট্রের মলি এবং জ্যারেন গার্সিয়া ঠিক সেটাই ভেবেছিলেন এবং ২০১৯ সালে তারা তা করেও ফেলেন। টেক্সাসের জোসুয়াতে তিন বেডরুম, দুই বাথরুমের বাড়ি বিক্রি করে তিন সন্তান নিয়ে তারা এখন থাকছেন একটি রিক্রিয়েশনাল ভেহিকল (আরভি) বা বিলাসবহুল একটি গাড়িতে।
এরইমধ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ২৫টি রাজ্য ভ্রমণ করেছেন, ব্যবহার করেছেন ৫টি গাড়ি। এখন তারা যে গাড়িতে থাকছেন সেটি ৪৪ ফুটের একটি মোটরহোম।
৩০ বছর বয়সী জ্যারেন গার্সিয়া বলেন, আমাদের জন্য কোনটা স্বাধীনতা তা আমরা খুঁজে পেয়েছি। প্রত্যেকের কাছেই তার স্বাধীনতার অর্থ আছে। আর স্বাধীনতা হিসেবে আমরা যা বেছে নিয়েছি, তার জন্য আমরা খুশি।
বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় গাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছেন জ্যারেন গার্সিয়া তখন একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বিভাগে কাজ করতেন। কাজের জন্য তাকে ভ্রমণ করতে হতো। পরিবারের সাথে একসাথে সময় কাটানো ও নিজের কাজের সময়-সূচি নিজে নির্ধারণের উদ্দেশ্যে তখন তারা এমন সিদ্ধান্ত নেন।
২৯ বছর বয়সী মলি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলেন, আমি বাচ্চাদের সাথে বাড়িতে থাকতাম আর দেখা যেত জ্যারেন তার কাজের জন্য রাজ্যের বাইরে থাকতো। দেখা যেত মাসের মধ্যে মাত্র কয়েকটা দিনই সে বাড়িতে থাকত। এভাবে কয়েকটা মাস যাওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, না, এভাবে আমি আর বাড়িতে থাকছি না। জ্যারেন যেখানে থাকবে আমিও সেখানেই থাকব, সেটা যদি গাড়িতে হয় তো গাড়িতেই থাকবো আমি। আর তারপর আমরা এখন এভাবে থাকছি।
মলি ও জ্যারেনের তিন সন্তান- লিলি (১৩), জ্যাক্সটন (৯) ও উইলো (৫)। মলি আপাতত তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করান এবং ব্লগ ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জন্য কনটেন্ট তৈরি করেন। তারা যে গাড়িতে আছেন ওই গাড়ি চালানোর দায়িত্ব জ্যারেনের। তিনি তার আগের চাকরি ছেড়ে এখন ইন্ডেপেন্ডেন্ট ইন্সুরেন্স অ্যাডজাস্টার হিসেবে কাজ করছেন। জীবিকার জন্য পাশাপাশি আরও কিছু কাজও করেন তারা।
মলি গার্সিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, বাচ্চারা দ্রুত তাদের নতুন জীবনের সাথে মানিয়ে নিয়েছে। তাদের এটা ভালোও লাগছে। মলি বলেন, আমরা বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা কি বাড়িতে ফিরে যেতে চাও? স্কুলে যেতে চাও কি না? তারা বলল যে, না, তারা ফিরতে চায় না। এটা তাদের ভালো লাগছে।
জ্যারেন ও মলির হিসাবে তারা যখন আগে স্বাভাবিক ধারায় একটি বাড়িতে থাকতেন মাসে তাদের ৩ হাজার ডলার করে খরচ হতো। এখন এই মোটরহোমের জীবনে তাদের খরচ অনেক কমে এসেছে।
মলি গার্সিয়া বলেন, যখন আমরা প্রথম এভাবে থাকা শুরু করি, তখন আমরা পুরো মাস ধরে একটি আরভি (রিক্রিয়েশনাল ভেহিকল) পার্কে ছিলাম, এর জন্য মাসিক খরচ ছিল ৬৫০ ডলার। বিদ্যুৎ ও পানির জন্য আমাদের দিতে হয় ১৩০ ডলার। এ সহ আমাদের দেওয়া বাকি ছিল আরভি পেমেন্ট। তখন আর আমাদের কোনো ট্রাক পেমেন্ট দেওয়া লাগছিল না।
খাবার খরচসহ সব মিলিয়ে মলির আনুমানিক হিসাব মাসে অন্তত ১ হাজার ডলার খরচ কমেছে তাদের।
জ্যারেন বলেন, ৫ হাজার ডলারেও আরভি কেনা যায়, আবার ৫ লাখেও কেনা যায়, আপনি কেমন মানুষ, তার ওপর নির্ভর করে আপনার কেমন আরভি প্রয়োজন। এটা আসলে একটা বাড়ি কেনার মতোই। সব কিছু মিলিয়ে আমি এটা বলব না যে, এর খরচ একেবারে কম, কারণ এখন জ্বালানির খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
মলি বলেন, আপনি যখন আরভিতে থাকা শুরু করবেন, যদি অনেক জিনিসপত্র নিয়ে ওঠেন, তাহলে গাড়িতে প্রচুর ওজনের চাপ পড়বে। এতে জ্বালানি খরচ বাড়বে। অনেক জিনিসপত্রও ভাঙতে পারে।
গার্সিয়ারা তাদের গন্তব্যের জন্য এখন বিভিন্ন ন্যাশনাল পার্ক, জাদুঘর, চিড়িয়াখানা এবং লাইব্রেরিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তাদের প্রিয় গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে উটাহ এবং মন্টানার ন্যাশনাল পার্ক।
খরচ কিভাবে বাজেটের মধ্যে রাখা যায় সে বিষয়ে মলি গার্সিয়া বলেন, অনেক উপায় রয়েছে। চাইলেই এর খরচ কমিয়ে আনা যায়। মানুষজন থাকে না এমন কোথাও গিয়ে কিছুদিন গাড়িতে থাকতে পারেন। এছাড়া অনেক ট্রেইল সদস্যপদ দেয়। আর সদস্যদের জন্য ক্যাম্পগ্রাউন্ড এবং আরভি পার্ক থাকে। আপনি যদি আগে কোথাও বেশি খরচ করে ফেলে থাকেন, তবে বিনামূল্যে সেখানে দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় থাকতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষকে আসলে খরচের ভয় দেখাতে চায় না। এই জীবনে আপনার অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হবে, আপনি অনেক ভ্রমণ করতে পারবেন এবং নিজের ইচ্ছে মতো সময় কাটাতে পারবেন।
জ্যারেন গার্সিয়া বলেন, আমরা সবাইকে বলতে চাই যে আপনি যদি ইচ্ছে করেন তবে আপনি অবশ্যই এটা করতে পারেন। এর জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হলো আপনি নিজে যেটা তৈরি করেছেন সেটাই। আপনি চাইলেই এ বাধা অতিক্রম করতে পারেন।
সূত্র : গুড মর্নিং আমেরিকা।
এনএফ