মুসলিম বলেই কি বিলকিসের পাশে কেউ নেই, প্রশ্ন শাবানা আজমির
ভারতের গুজরাটে অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ ও তার পরিবারের ৭ জনকে হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারতের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এ ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিলকিস বানুর ধর্ষক ও তার পরিবারের হত্যাকারী ওই ১১ জন এখন মুক্ত। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে যেভাবে এর প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। এসব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অভিনেত্রী শাবানা আজমি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে শাবানা বলেন, মুসলিম বলেই কি বিলকিস বানুর পাশে কেউ নেই? তার জন্য কেউ সরব হলো না? এর থেকে বেশি আর কী ভাবব বলুন? দেশে এখন শুধু হিন্দু-মুসলিম বিতর্ক। আমরা তো মনে হয় এরকম কাণ্ড করে দেশে আরও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করাই লক্ষ্য। সেই রেষারেষিকে ভোটের কাজে লাগানো। এর থেকে আমার আর কিছু মনে হয় না। ওই ১১ জনের পক্ষে বলা হয়েছে, ওরা ব্রাহ্মণ। ওদের মধ্যে একটা ‘সংস্কার’ রয়েছে। অপরাধ করেছে কী করেনি তাও জানি না।
তিনি বলেন, ১১ জনকে অপরাধী ঘোষণা করে তাদের আদালত সাজা দিয়েছে। তারপরেও কেউ বলছে, ওরা অপরাধ করেনি! কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা ছাড়া গুজরাট সরকার এমনটা কীভাবে করতে পারে? নারী কমিশন থেকে মানবাধিকার কমিশন কেন নীরব? বিজেপির নারী নেতারা কেন নীরব? এটা পার্টি লাইনের জন্য? মানবিকতা বলে কিছু কি আর বেঁচে নেই? এ কোন সমাজে বাস করছি?
শাবানা আজমি বলেন, ভেবেছিলাম ওইসব কয়েদিদের ছেড়ে দেওয়ার পর দেশজুড়ে বিশাল প্রতিক্রিয়া হবে। একদিন, দুদিন, তিনদিন অপেক্ষা করলাম। মিডিয়া বা অন্য কোথাও সেরকম কিছু দেখলাম না। একদিন আমি কয়েকজনের সঙ্গে একটা আলোচনায় বসেছিলাম। একজন বলল, ওরা তো অনেকদিন জেল খেটেছে। এখন তাদের ছেড়ে দেওয়া হলে কী ক্ষতি!
তিনি বলেন, যারা এ কথা বলেছে তারা সবাই জানে ওই ১১ জন কী করেছে। ওদের কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আমার মনে হয়েছে বিলকিস বানুর সঙ্গে কী হয়েছে তার কোনো ধারণা ওদের নেই। ওই ১১ জনকে শুধু ছেড়েই দেওয়া হয়নি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। ভেবে দেখুন আমরা সমাজকে কী বার্তা দিচ্ছি? কী বার্তা দিচ্ছি দেশের মেয়েদের? যেদিন ওদের ছেড়ে দেওয়া হয় সেই দিনই ভারত সরকার নারী শক্তির কথা বলছিল। ভাবতে পারছি না, নির্ভয়া কাণ্ডে গোটা দেশ রাস্তায় নেমেছিল। বিলকিস বানুর ক্ষেত্রে কেন নয়?
শাবানা বলেন, আমার বলার কিছু নেই। আমি স্তম্ভিত। এত বড় ট্রাজেডির পরও বিলকিস সাহস হারাননি। অপরাধীদের শাস্তি হয়েছিল। এখন ওইসব কয়েদিদের ছেড়ে দেওয়া পর বিলকিসের স্বামী বলছে ও যখন জীবনকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল তখনই এমন ঘটনা ঘটল। ওই আইনজীবী বলছে, একা আর কত লড়াই করবে? এসব হওয়ার পরেও কি আমাদের এগিয়ে আসা উচিত নয়? ভারতে যেসব নারী রোজ ধর্ষণের হুমকি পান তাদের কি একটা নিরাপত্তা বোধের বার্তা দেওয়া যেত না? বিলকিসের সামনে আমি দাঁড়াব কী করে? দেশের মহিলা সংসদ সদস্যদের কী হলো? তার কীভাবে চুপ করে রয়েছেন?
ওএফ