এলএনজির রমরমা বাণিজ্য, ৬০ শতাংশ রপ্তানি বাড়াচ্ছে আমেরিকা
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়া থেকে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন বাড়ছে তরলীকৃত জ্বালাানি গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা। এ ব্যাপারটিকে আমলে নিয়েই চলতি বছর এলএনজির উৎপাদন ও রপ্তানি ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো।
এতদিন রাশিয়ার জ্বালানি গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ইউরোপ। ইউরোপের মোট গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ আসত রাশিয়া থেকে। নর্ড স্ট্রিম ১ ও নর্ড স্ট্রিম ২— দু’টি পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সরাসরি সরবরাহ করা হতো জ্বালানি গ্যাস।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর রাশিয়ার ওপর একরাশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অবশ্য গ্যাস অন্তর্ভূক্ত ছিল না, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে রাশিয়া ইতোমধ্যে নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস পাঠানো বন্ধ করেছে, আর নর্ড স্ট্রিম ১ দিয়ে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে প্রায় ৮০ ভাগ।
এদিকে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি করতে দেশটির সরকারের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। ফলে ভবিষ্যতে ইউরোপে রুশ গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে— এমন সম্ভাবনাও কম।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগ পর্যন্ত এলএনজি গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের ব্লক। যুদ্ধ বাঁধার পর থেকে এখন তরলীকৃত গ্যাসের বাজারে সবচেয়ে বড় ক্রেতা হিসেবে হাজির হয়েছে ইউরোপ।
বিশ্বজুড়ে এলএনজির ব্যাবসার কী পরিমাণ ফুলে-ফেঁপে উঠছে, তার ব্যাখ্যায় রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে ইউরোপে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) গ্যাসের দাম পৌঁছেছে ৮৪ ডলারে।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত এলএনজির প্রতি এমএমবিটিইউ’র দাম বেড়েছে ১০ ডলার। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম তরলীকৃত গ্যাসে এত বেশি মুনাফা দেখছে এই খাতের মার্কিন উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকরা।
এই পরিস্থিতিতে বাজারের বাড়তি চাহিদা সামাল দিতে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর এলএনজি উদ্যোক্তারা মহাদেশজুড়ে নতুন ১২টি তরলীকৃত গ্যাসের উৎপাদন কারখানা (প্ল্যান্ট) নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলীয় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মোট ৮টি, কানাডায় ২টি ও মেক্সিকোতে ২টি এলএনজি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে চলতি বছরের মধ্যেই।
মার্কিন এলএনজি উৎপাদন কোম্পানি ভেঞ্চার গ্লোবাল এলএনজির শীর্ষ নির্বাহী মাইক স্যাবেল রয়টার্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘এলএনজির বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে এবং ইউরোপ ও এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের যত মিত্র দেশ রয়েছে, (সেসব দেশে) গ্যাস সরবরাহে ছেদ না পড়ে ছেদ না পড়ে— সেজন্যই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
‘এই নতুন ১২টি প্ল্যান্টে খুব শিগগিরই উৎপাদন শুরু হবে। সেক্ষেত্রে আগামী বছরের শুরু থেকেই উত্তর আমেরিকার ব্যবসায়ীরা এলএনজি রপ্তানি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন।’
এলএনজি রপ্তানিকারী মার্কিন কোম্পানি সেন্টার ফর লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাসের নির্বাহী পরিচালক শার্লি রিডল উদ্যোক্তাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। একদিকে যেমন চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে নতুন ক্রেতারা এলএনজি ক্রয়ে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তিতে আগ্রহী। এ কারণে সার্বিক বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।’
এলএনজির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল পর্যন্ত এলএনজি রপ্তানিতে শীর্ষে ছিল অস্ট্রেলিয়া। তারপর দ্বিতীয় স্থানে ছিল কাতার, তৃতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র ও চতুর্থ স্থানে রাশিয়া।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত ৬ মাস ধরে বিশ্ববাজারে এলএনজি সরবরাহে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র।
এসএমডব্লিউ