রুশদির ওপর হামলাকে ‘নিষ্ঠুর রসিকতা’ ভেবেছিলেন উপস্থাপক
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে ছুরি হামলার শিকার হয়েছিলেন বুকারজয়ী লেখক সালমান রুশদি। আকস্মিকভাবে হওয়া এই হামলা এতোটাই গুরুতর ছিল যে রুশদিকে তাৎক্ষণিকভাবে ভেন্টিলেটরে পর্যন্ত নিতে হয়।
গত শুক্রবার হওয়া এই হামলার সময় রুশদির ঠিক পাশেই ছিলেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। আর বুকারজয়ী এই লেখকের ওপর আকস্মিক এই হামলাকে প্রাথমিকভাবে নিষ্ঠুর রসিকতা ভেবেছিলেন তিনি। সোমবার (১৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির ওপর আক্রমণের পর কয়েক মুহূর্ত পর্যন্ত কেউ তার নিষ্ঠুর রসিকতা করছে বলে মনে হয়েছিল সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ওই ব্যক্তির। তবে রুশদির শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান।
এএফপি বলছে, শুক্রবার নিউইয়র্কে একটি সাহিত্য অনুষ্ঠানের মঞ্চে রুশদির ওপর আক্রমণের সময় আহত হন অলাভজনক গ্রুপ সিটি অব অ্যাসাইলামের সভাপতি হেনরি রিস। হামলার সময় রুশদির ঘাড়ে ও পেটে ছুরিকাঘাত হলেও তিনি বলছেন, মঞ্চে যা ঘটছে তা বুঝতে বেশ তার বেশ কিছু মুহূর্ত সময় লেগেছে।
৭৩ বছর বয়সী হেনরি রিস মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে বলেন, ‘এটি যে হামলা হচ্ছে তা বোঝা খুব কঠিন ছিল। এটি একটি বাজে প্র্যাংক বা নিষ্ঠুর রসিকতার মতো লাগছিল এবং এতে বাস্তবতার কোনো ধারনা ছিল না। তারপর যখন তার (সালমান রুশদির) পেছনে রক্ত দেখতে পাই, তখন বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হই।’
এএফপি বলছে, নিজের ক্ষতবিক্ষত এবং ফোলা ডান চোখের ওপর একটি বড় ব্যান্ডেজ নিয়েই রোববার সিএনএন কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন হেনরি রিস। তবে শুক্রবারের ওই আক্রমণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো আলোচনা করতে অস্বীকার করেন তিনি।
কিন্তু তিনি এটি বলেছেন যে, যখন একজন ব্যক্তি মঞ্চে দৌড়ে আসেন তখন তিনি ভেবেছিলেন, এই ঘটনাটির সঙ্গে ইরানের নেতারা রুশদিকে হত্যা করার জন্য মুসলমানদের জানানো আহ্বানের তথা ধর্মীয় ডিক্রির একটি ‘খারাপ রেফারেন্স’ রয়েছে এবং ‘এটি সত্যিকারের আক্রমণ ছিল না’।
মূলত ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য বহু বছর ধরেই সালমান রুশদি কট্টর ইসলামপন্থিদের হুমকি পেয়ে আসছিলেন। শুক্রবার নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠান চলাকালেই তার ওপর হামলা হয়। হামলার পর পুলিশ হাদি মাতার নামে ২৪ বছর বয়সী এক যুবককে আটক করে।
বিবিসি বলছে, রুশদি তার উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য বছরের পর বছর মৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। তার ওই উপন্যাসকে কিছু মুসলমান নিন্দাজনক বা অপবিত্র বলে মনে করেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছুরি হামলার শিকার হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত উপন্যাসিক সালমান রুশদি। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে নিউ ইয়র্কের শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন বুকারজয়ী এই লেখক। যখন তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখনই এক লোক দৌড়ে স্টেজে উঠে ছুরি নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।
উল্লেখ্য, আহমেদ সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালে মুম্বাইয়ে এক কাশ্মিরি মুসলিম পরিবারে, ভারত ভাগের ঠিক আগে আগে। ১৯৮১ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখ কপি বিক্রি হয়।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ আর সহিংসতার মধ্যে বহু দেশে বইটি নিষিদ্ধ হয়, রুশদির জন্মস্থান ভারতের সরকারই প্রথম সেই সিদ্ধান্ত নেয়। এ বই প্রকাশের পর প্রায় ১০ বছর তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি সে সময় এই লেখকের মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া ঘোষণা করেন। রুশদির মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৩০ লাখ ডলার। ইরানের সেই ঘোষণা এখনও বহাল আছে।
পরবর্তীতে ইরান সরকার খোমেনির ওই ঘোষণার বিষয়ে আর আগে না বাড়লেও সরকার সমর্থিত একটি ধর্মীয় ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে পুরস্কারের ওই অংকের সঙ্গে আরও ৫ লাখ ডলার যোগ করার ঘোষণা দেয়।
টিএম