ন্যান্সি পেলোসির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি চীনের
চীনের বার বার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও তাইওয়ান সফর করায় মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এ বিষয়ক একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক তাইওয়ান সফরের মাধ্যমে ন্যান্সি পেলোসি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গুরুতরভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন এবং চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতাকে নিদারুনভাবে অবমূল্যায়ন করেছেন।’
‘এ কারণে পেলোসি ও তার পরিবারের নিকট সদস্যদের ওপর নিষেধজ্ঞা জারি করছে চীনের সরকার। যতদিন এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে, ততদিন এই দেশে তিনি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য এ দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না।’
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এর বেশি আর কিছু বলা হয়নি।
পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ সফর করতে ০১ আগস্ট (সোমবার) ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন ন্যান্সি পেলোসি। এই সফরে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান সফরের কথা ছিল।
তবে তিনি ওয়াশিংটন ছাড়ার আগেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে চাউর হয়ে যায়— চলতি এ সফরে তাইওয়ানেও যাবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ান সরকারের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন।
ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে আসতে পারেন—এ খবর প্রচারিত হওয়ার পর সোমবারই যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দেয় চীনের সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সোমবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদি পেলোসি সত্যিই তাইওয়ান সফরে আসেন, তাহলে তার পরিণতি খুবই গুরুতর হবে।
চীনের সেনাবাহিনী এক্ষেত্রে ‘চুপচাপ অলসভাবে বসে থাকবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন লিজিয়ান।
তারপর মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের অপর মুখপাত্র হুয়া চুনইয়িং বলেন, ন্যান্সির এই সফর কোনোভাবেই ব্যক্তিগত নয় এবং যদি যুক্তরাষ্ট্র একে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে চীন ‘বৈধভাবেই প্রয়োজনীয় পাল্টা পদক্ষেপ নেবে।’
কিন্তু চীনের দফায় দফায় হুঁশিয়ারির মধ্যেই তাইওয়ানে পৌঁছান ন্যান্সি পেলোসি। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১১টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টা) তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে বিমানবন্দরে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি অবতরণ করে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইওয়ানে পৌঁছে সেখানকার প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পেলোসি। বৈঠকে চীনের কবল থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা দানের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক সেরে বুধাবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে তাইপে ত্যাগ করেন পেলোসি। তার একদিন পরই এই দ্বীপভূখণ্ডের চারপাশে তাইওয়ান প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরে ইতিহাসের বৃহত্তম সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। সেই মহড়া এখনও চলছে।
তারই ধারাবাহিকতায় এবার পেলোসির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো।
গত কয়েক বছরে অবশ্য মার্কিন সরকারের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীনের সরকার। এ প্রতিনিধিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাভাররোও রয়েছে। জিনজিয়াং ও হংকংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘণ ইস্যুতে তাদেরকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ