উত্তাপ ছড়িয়ে তাইওয়ান ছাড়লেন পেলোসি
চীনের হুঁশিয়ারিকে উপেক্ষা করে তাইওয়ান সফরে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ন্যান্সি পেলোসি। সে সফর শেষ করে ইতোমধ্যে সেই দ্বীপ ভূখণ্ড থেকে বিদায়ও নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার।
বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে রাজধানী তাইপের বিমানবন্দর তিনি ত্যাগ করেন বলে এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
দক্ষিণ কোরিয়ার দৈনিক কোরিয়া হেরাল্ড বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ দিন সন্ধ্যায় রাজধানী সিউলের বিমানবন্দরে অবতরণ করবে পেলোসিকে বহনকারী মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিশেষ বিমান। পরের দিন বৃহস্পতিবার ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, জলবায়ু সংকটসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার কিম জিন-পিও’র সঙ্গে বৈঠক করবেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাপান সফরে যাবেন পেলোসি।
পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ সফর করতে ০১ আগস্ট, সোমবার ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন ন্যান্সি পেলোসি। এই সফরে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান সফরের কথা ছিল।
তবে তিনি ওয়াশিংটন ছাড়ার আগেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে চাউর হয়ে যায়— চলতি এ সফরে তাইওয়ানেও যাবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ান সরকারের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন।
ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে আসতে পারেন—এ খবর প্রচারিত হওয়ার পর সোমবারই যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দেয় চীনের সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সোমবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদি পেলোসি সত্যিই তাইওয়ান সফরে আসেন, তাহলে তার পরিণতি খুবই গুরুতর হবে।
চীনের সেনাবাহিনী এক্ষেত্রে ‘চুপচাপ অলসভাবে বসে থাকবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন লিজিয়ান।
তারপর মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের অপর মুখপাত্র হুয়া চুনইয়িং বলেন, ন্যান্সির এই সফর কোনোভাবেই ব্যক্তিগত নয় এবং যদি যুক্তরাষ্ট্র একে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে চীন ‘বৈধভাবেই প্রয়োজনীয় পাল্টা পদক্ষেপ নেবে।’
কিন্তু চীনের দফায় দফায় হুঁশিয়ারির মধ্যেই তাইওয়ানে পৌঁছান ন্যান্সি পেলোসি। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১১টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টা) তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে বিমানবন্দরে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি অবতরণ করে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পেলোসি। বৈঠকে চীনের কবল থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
১৯৪০ সালের গৃহযুদ্ধে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তাইওয়ান। তারপর থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতিকরা নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে দাবি করলেও চীন এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে এখনও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।
৩৬ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ভূখণ্ডের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব এবং প্রায় ৩ লাখ সক্রিয় সদস্যের একটি সেনাবাহিনী।
এখন পর্যন্ত অবশ্য খুবই অল্প কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনো দূতাবাস খোলেনি দেশটি।
তবে তাইওয়ান বিষয়ক একটি আইনের আওতায় এই স্বাধীনতাকামী দ্বীপভূখণ্ডকে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
যেসব ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে কূটনৈতিক তিক্ততা চলছে, সেসবের মধ্যে প্রধানতম ইস্যু তাইওয়ান।
এসএমডব্লিউ