দোনেতস্ক থেকে বেসামরিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ জেলেনস্কির
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেতস্ক অঞ্চলের বেসামরিক মানুষদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার (৩০ জুলাই) গভীর রাতে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, বৃহত্তর ডনবাস অঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা লক্ষাধিক মানুষকে তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।
দোনেতস্ক অঞ্চলের পাশাপাশি প্রতিবেশী লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে বৃহত্তর ডনবাস অঞ্চলটি গঠিত। আর এই অঞ্চলেই এই কার্যত ইউক্রেনীয় ও রুশ বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। রোববার (৩১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাতের ভাষণে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এখন যত বেশি লোক দোনেতস্ক অঞ্চল ছেড়ে চলে যাবে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী তত কম লোককে হত্যা করার মতো সময় পাবে। যে বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
শনিবার জেলেনস্কি আরও বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চললেও লাখ লাখ মানুষ এখনও ডনবাসের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছে।
ইউক্রেনীয় এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে অস্বীকার করছেন, তবে তাদের এখান থেকে সরে যাওয়া দরকার। আপনার যদি সুযোগ থাকে, অনুগ্রহ করে যারা এখনও ডনবাসের যুদ্ধ অঞ্চলে রয়ে গেছে তাদের সাথে কথা বলুন। অনুগ্রহ করে তাদের বোঝান যে, এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়া প্রয়োজন।’
এদিকে পৃথকভাবে ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুককে উদ্ধৃত করে বলেছে যে, শীত মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ডনবাস অঞ্চলের বেসমারিক লোকদের সরিয়ে নেওয়া দরকার। কারণ এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে।
তবে কিয়েভ নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে বেসামরিক লোকদের সরে যেতে এবারই প্রথম ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ আহ্বান জানাচ্ছে না। ইউক্রেনে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হার্বস্ট রয়টার্সকে বলেছেন, জ্বালানির ঘাটতির কারণে নয় বরং চলমান এই যুদ্ধে আরও তীব্র লড়াইয়ের আশঙ্কার কারণেই বেসামরিক মানুষকে সরে যেতে বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই নির্দেশ দিয়েছেন। আমি যা জানি তা হলো- দোনেতস্কে ভয়ানক লড়াই চলছে। রাশিয়ানরা দোনেতস্কের পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক অঞ্চলও কয়েক সপ্তাহ আগে দখল করে নিয়েছে। আমি দোনেতস্কে আরও ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের আশঙ্কা করছি।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প এলাকা ডনবাস দখল করতে চাইছে। এই ভূখণ্ডটি লুহানস্ক এবং দোনেতস্ক নামে দু’টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখানে রুশপন্থি দু’টি বিদ্রোহী স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
যুদ্ধ শুরুর পর পাঁচ মাসেরও বেশি সময়ে ইউক্রেনে হাজারও মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন। এছাড়া রুশ আগ্রাসনে ইউক্রেনের সামরিক-বেসামরিক অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
টিএম