বিশ্বে চতুর্থ রোগী হিসেবে এইডসমুক্ত হলেন তিনি
আশির দশক থেকে প্রাণঘাতী এইচআইভিকে সঙ্গী করে বসবাস করে আসা এক রোগীর শরীর থেকে এই ভাইরাস নির্মূল হয়ে গেছে। বিশ্বে চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এক রোগী এইচআইভি ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ব্লাড ক্যান্সার লিউকেমিয়ার চিকিৎসার জন্য তার বোন ম্যারো ট্রাসপ্ল্যান্ট করা হয়েছিল। প্রাকৃতিকভাবে এইচআইভিপ্রতিরোধী একজন দাতার বোন ম্যারো ওই রোগীর শরীরে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছিল।
সুস্থ হয়ে ওঠা ৬৬ বছর বয়সী ওই রোগী পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি। বর্তমানে তিনি এইচআইভির ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভাইরাসটি তার শরীরে আর না থাকায় তিনি অনেক খুশি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ডুয়ার্টের যে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ‘সিটি অব হোপ’ বা ‘আশার শহরের’ রোগী হিসাবে অভিহিত করেছে। অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল সব ওষুধ প্রায় স্বাভাবিক জীবন দিতে পারার আগে ওই ব্যক্তির অনেক বন্ধু এইচআইভিতে মারা গেছেন।
‘এমন দিন দেখতে পাব কখনো চিন্তা করতে পারিনি’
হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষতি করে। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়।
এক বিবৃতিতে ওই ব্যক্তি বলেছেন, অন্য অনেকের মতো ১৯৮৮ সালে আমার এইচআইভি ধরা পড়ার পর আমি ভেবেছিলাম এটি মৃত্যুদণ্ড। আমি কখনই ভাবিনি যে, আমার শরীরে এইচআইভি আর নেই এবং আমি সেই দিনটি দেখার জন্য বেঁচে থাকব।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, ওই রোগীকে থেরাপি দেওয়া হয়েছিল, তবে তা এইচআইভির জন্য নয়। ৬৩ বছর বয়সে তার ব্ল্যাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরে তার মেডিকেল টিম ক্যান্সারযুক্ত রক্তকণিকা প্রতিস্থাপনের জন্য বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের সিদ্ধান্ত নেয়। কাকতালীয়ভাবে একজন দাতা পাওয়া যায়; যিনি প্রাকৃতিকভাবেই এইচআইভিপ্রতিরোধী ছিলেন।
ভাইরাসটি মাইক্রোস্কোপিক প্রোটিন সিসিআরফাইভের মাধ্যমে মানুষের শরীরের শ্বেত রক্তকণিকায় প্রবেশ করে। তবে কিছু মানুষের শরীরে সিসিআরফাইভের মিউটেশন ঘটে; যা প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয় এবং এইচআইভিকে দূরে রাখে।
অবশেষে নিরাময়
ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর সিটি অব হোপের ওই রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার শরীরে এইচআইভির অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
১৭ মাসের বেশি সময় হলো তিনি প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সিটি অব হোপের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানা ডিক্তার বলেছেন, রোগীকে এইচআইভিমুক্ত হয়েছেন বলে আমরা জানাতে পেরে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। তার আর অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন নেই; যা তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিচ্ছেন।
এর আগে, ২০১১ সালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো জার্মানিতে টিমোথি রে ব্রাউন নামের এক রোগী এইচআইভি মুক্ত হয়েছিলেন। এরপর গত তিন বছরে বিশ্বে এমন আরও তিনজন এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তবে এ ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে এইচআইভি থেকে নিরাময় পাওয়া রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক সিটি অব হোপের ওই রোগী। শুধু তাই নয়, সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘসময় এইচআইভিকে সঙ্গী করে বসবাসও করেছেন তিনি।
বিশ্বে বর্তমানে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট বৈপ্লবিক কোনও কিছু ঘটাতে যাচ্ছে না। চিকিৎসক ডিক্তার বলেছেন, এটি উল্লেখ করার মতো সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ জটিল এক পদ্ধতি। যে কারণে এটি এইচআইভিকে সঙ্গী করে বসবাস করে আসা বেশিরভাগ রোগীর জন্য যথাযথ বিকল্প নয়।
এসএস