আপাতত রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা নয়: জেলেনস্কি
গত ৫ মাসের অভিযানে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল দখল করেছে, সেসব ফের মুক্ত করার আগ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বা কোনো প্রকার শান্তি আলোচনায় যাবেন না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের এই অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তিনি।
সম্প্রতি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছেন, (ইউক্রেনে) যুদ্ধবিরতি ঘোষণা কিংবা তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিদের শান্তি আলোচনাকে এগিয়ে নিতে রাশিয়া সবসময়ই ইতিবাচক। কিন্তু ইউক্রেনের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
তার এই অভিযোগের তীব্র সমালোচনা করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জেলনস্কি বলেন, ‘তারা (রুশ বাহিনী) আমাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা না বলে এখানে এলো, জনগণকে হত্যা করল, ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করল…আর এখন বলছে— ইউক্রেন আলোচনা করতে চাইছে না!’
‘তারা মানুষ হত্যা করছে, বিভিন্ন শহরে ঢুকে সেসব ধ্বংস করে ফেলছে, তারপর বলছে— চল আলোচনা শুরু করি। কাদের সঙ্গে তারা আলোচনা করবে? পাথরের সঙ্গে? তারা রক্তস্নান করছে, তাদের সারা দেহে নিহত ইউক্রেনীয়দের রক্ত; আর এই রক্ত ধুয়ে ফেলা সম্ভব নয়। আমরা তা হতে দেব না।’
‘ক্ষুধার্ত তিমি যেভাবে তার খাবার গিলে খায়, তেমনি একে একে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে চলেছে রাশিয়া। এই মুহূর্তে যদি যুদ্ধবিরতি কিংবা শান্তি আলোচনা শুরু হয়, তাহলে তারা কিছুদিন, কয়েক মাস কিংবা ১-২ বছর শান্ত থাকবে। তারপর ফের শুরু করবে ইউক্রেন দখলের অভিযান।’
‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনে দখল করা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রুশ বাহিনী না সরছে, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বা শান্তি আলোচনা— কোনোটাই সম্ভব নয়।’
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
বুধবার ১৫২তম দিনে গড়িয়েছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অভিযান। এই চার মাস সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্ক, ইউক্রেনের দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম, মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে।
এদিকে, রুশ বাহিনী অভিযান শুরুর পর থেকে গত ৫ মাসে ইউক্রেনকে বেশ কয়েক দফায় সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। সর্বশেষ শুক্রবার ইউক্রেনকে ২৭ কোটি ডলারের সামরিক প্যাকেজ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্র: আরটি, রয়টার্স।
এসএমডব্লিউ