শ্রীলঙ্কায় মধ্যরাতে বিক্ষোভস্থলে সেনা অভিযান, নেতাদের গ্রেপ্তার
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। শুক্রবার (২২ জুলাই) মধ্যরাত ও ভোরের দিকে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের পর বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে প্রেসিডেনশিয়াল সেক্রেটারিয়েটের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে সেনাবাহিনী।
একইসঙ্গে সেখান থেকে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নেতাকেও আটক করা হয়েছে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আলজাজিরা জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ’ করার পর রাজধানী কলম্বোর রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ‘গোটা-গো-গামা’ প্রতিবাদস্থলে বহু তাঁবুও ধ্বংস করে দিয়েছে সৈন্যরা। একইসঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রতিবাদী নেতাকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি প্রায় ১০০ জন বিক্ষোভকারীসহ এলাকাটি ঘিরে রাখা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিসের সামনে থেকে বিক্ষোভকারীরা সরে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তাদের বিরুদ্ধে এই সামরিক অভিযান চালানো হয়। অবশ্য ২২ জুলাই রাষ্ট্রপতি সচিবালয় থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা।
‘গোটা-গো-গামা’ প্রতিবাদস্থলে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ নিপুন চারকা জয়সেকারা নামে তরুণ এক বিক্ষোভকারী আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘মাঝরাতে আমরা শুনতে পেলাম, সেনাবাহিনীর একটি বিশাল দল গোটা-গো-গামার দিকে আসছে এবং হঠাৎ আমরা তাদেরকে রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ে ছুটে যেতে দেখলাম।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘এরপরই শিগগিরই তারা এলাকাটি ঘেরাও করে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের নির্মমভাবে আক্রমণ করে যেন আমরা গুণ্ডা।’
জয়সেকারা আরও বলেন, সামরিক ক্র্যাকডাউন থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় তিনি সামান্য আঘাত পেয়েছেন। এছাড়া সামরিক আক্রমণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে জয়সেকারা এটি সরাসরি সম্প্রচার শুরু করলেও পরে বিশৃঙ্খলায় নিজের স্মার্টফোনটি তিনি হারিয়ে ফেলেন বলেও জানান।
নিপুন চারকা জয়সেকারা বলেন, ‘কিছু লোককে খুব খারাপভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে; অমানবিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে যেন তাদের কোনো হৃদয় নেই। আমাদের এখন কোথাও যাওয়ার নেই। আমরা গোটা-গো-গামাতে আটকে আছি। আমার কাছে এখন কিছুই নেই; এমনকি আমার ফোনও না। আমি এখন পুরোনো একটি ফোন ব্যবহার করছি। জামাকাপড় ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নেই।’
আলজাজিরা বলছে, মধ্যরাতে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর এই অভিযানে প্রায় ১০ জন বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূলত ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বিক্ষোভস্থলে হামলার এই ঘটনা ঘটলো।
তার পূর্বসূরি গোতাবায়া রাজাপাকসে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে সপ্তাহখানেক আগে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান তিনি। এরপর রনিল বিক্রমাসিংহে দিন দু’য়েক আগে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
এদিকে শ্রীলঙ্কা বার অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, মধ্যরাতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান ও নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাদের অবগত করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সালিয়া পেইরিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের অবস্থান অবশ্যই জানাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি এবং সেনা কমান্ডারকেও বার্তা পাঠিয়েছি। নৃশংস শক্তির অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার এই দেশকে সংকট থেকে বের হতে এবং দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে না।’
টিএম