আরও ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলের পরিকল্পনা করছে রাশিয়া: যুক্তরাষ্ট্র
ক্রিমিয়া দখলের মতো একইভাবে ইউক্রেনের আরও ভূখণ্ড দখলের জন্য রাশিয়া পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দাবি, ক্রিমিয়ার মতো একই ‘প্লেবুক’ ব্যবহার করে ইউক্রেনের আরও ভূখণ্ড দখলের পরিকল্পনা করছে মস্কো।
মার্কিন গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, রাশিয়া ইতোমধ্যেই ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলের ভিত্তিও তৈরি করছে। বুধবার (২০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
জন কিরবি আরও বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই রাশিয়ায় যোগদানের বিষয়ে ‘ভুয়া’ গণভোটের আয়োজন করতে পারে ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত অঞ্চলগুলো। ২০১৪ সালে একইরকম একটি গণভোটের মাধ্যমে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করেছিল মস্কো। সারা বিশ্বেই ওই গণভোটকে ব্যাপকভাবে অবৈধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমেরিকান জনগণের কাছে এটি স্পষ্ট করতে চাই। এটির (ভুয়া গণভোটের) মাধমে কাউকে বোকা বানানো যায়নি। ২০১৪ সালের ওই একই প্লেবুক আবারও ব্যবহারের চেষ্টা করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।’
তিনি অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলগুলো পরিচালনা করার জন্য অবৈধ রুশপন্থি কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করা হচ্ছে। মূলত রাশিয়ার অংশ হওয়ার জন্য গণভোট আয়োজনের লক্ষ্যেই এসব রুশপন্থি কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
কিরবি বলেন, সার্বভৌম ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলের জন্য রাশিয়া এই ভোটের ফলাফল ব্যবহার করবে। তিনি আরও বলেন, নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্তিকরণে ইউক্রেনের যেসব অঞ্চলকে রাশিয়া টার্গেট করেছে তার মধ্যে খেরসন, জাপোরিঝিয়া, দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক রয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প এলাকা ডনবাস দখল করতে চাইছে। এই ভূখণ্ডটি লুহানস্ক এবং দোনেতস্ক নামে দু’টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখানে রুশপন্থি দু’টি বিদ্রোহী স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় পাঁচ মাসে ইউক্রেনে হাজারও মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন। এছাড়া রুশ আগ্রাসনে ইউক্রেনের সামরিক-বেসামরিক অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
টিএম